মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনিও না ফেরার দেশে
স্টাফ রিপোর্টার: সেফটিক ট্যাঙ্কি থেকে একে একে স্কুলছাত্রীসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারপাড়ার এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া দুজন হলেন কার্পাসডাঙ্গা বাজারপাড়ার এরশাদুল ইসলামের মেয়ে কার্পাসডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী (অনিয়মিত) আসমা খাতুন (১৬) এবং তার দোকান কর্মচারী একই উপজেলার কালিয়াবকরী গ্রামের মতলেব ম-লের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (২৪)। গতকাল রাতেই তাদের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী এরশাদুল ইসলাম তার দোকান সংলগ্ন বাড়িতে নতুন সেফটিক ট্যাংক নির্মাণ করেন। তিন দিনের টানাবৃষ্টিতে সেফটিক ট্যাংকে পানি জমে যায়। বিকেল ৪টার দিকে এরশাদুলের মেয়ে আসমা খাতুন ওই ট্যাংকের পানি পরিষ্কার করতে নামে। এরপর তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তাকে তুলতে নামেন দোকান কর্মচারী হাসিবুল ইসলাম। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও তারা উঠে না আসায় এবং তাদের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের খবর দেয়া হয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সেফটিক ট্যাংকের ভেতর বাতাস প্রবেশ করালে লাশ দুটি পানিতে ভেসে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, সেফটিক ট্যাংকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হওয়ায় তারা অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়।
রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল, দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক ও ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত ১১টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করা হয়। লাশ দুটির সুরহতালকারী পুলিশ কর্মকর্তা কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মেজবাহুর রহমান বলেছেন, তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়নি এবং প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক কোনোকিছু মনে হয়নি।
এদিকে ছাত্রী আসমা ও দোকান কর্মচারী হাসিবুলের একইসাথে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নানামুখী গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আসমাকে বাঁচাতেই হাসিবুল সেফটিক ট্যাঙ্কির মধ্যে নামেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলে নেপথ্যে হাসিবুলের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা পয়সাসহ দোকান মালিকের মেয়ে আসমার সাথে প্রেমজ সম্পর্কের কথাও বলেছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, একটি মেয়ে সেফটিক ট্যাঙ্কির পানি পরিষ্কার করতে নিচে নামলো এটা যেমন রহস্যজনক, তেমনি তাদের দোকান কর্মচারীও তাকে উদ্ধার করতে সেফটিক ট্যাঙ্কির ভেতর নেমে জীবন দিলো এটাও রহস্যজনক। এছাড়া ওই সময় ঘটনাস্থলে পরিবারের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অথচ তাদের মধ্যে কেউ নামলো না, শুধুমাত্র হাসিবুলই নামলো কেন? তাহলে কী প্রেমের টানেই জীবন দিলো হাসিবুল, না কী পেছনে অন্য রহস্য লুকিয়ে আছে? বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তারা। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে বলেছে, এটি সম্পূর্ণ দুর্ঘটনা। দুজনের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিলো না।
কালিয়াবকরী এলাকা থেকে অপর একটি পক্ষ বলেছেন, হাসিবুল খুব ছোট থেকেই এরশাদুলের দোকানে কাজ করছিলো। মাঝে কিছুদিন বিদেশেও পাড়ি জমায় হাসিবুল। বিদেশে উপার্জিত সমস্ত অর্থই না কি ওই দোকান মালিক এরশাদুলের কাছে গচ্ছিত রাখে হাসিবুল। তার নিজ পরিবারের কারোর হাতে একটি কানাকড়িও না কি দেয়নি সে। তার পরিবার এক রকম নিঃস্ব অবস্থায় বলেও জানান তারা।