নীবর প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা : বাড়তে পারে প্রার্থীর সংখ্যা
দর্শনা অফিস: চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই দর্শনা পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে পারে নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে-ভাগেই বিএনপি সমর্থন প্রত্যাশী হাফ ডজনের বেশী প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আ.লীগ সমর্থন প্রত্যাশী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান ছাড়া কারো নামই শোনা যাচ্ছে না। মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে পুরাতন ও নতুনদের নাম শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষন এখনো নির্ধারণ না হলেও সকল পদের প্রার্থীই রাজনৈতিক দলের সমর্থনের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন এবং নীতি নির্ধারক ও দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় অব্যাহত রেখেছেন। দর্শনার গুরুত্বের কথা ভেবেই ১৯৯২ সালে তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়নকে বিভক্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় দর্শনা পৌরসভা। আলাদাভাবে গঠন করা পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮-২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত দর্শনা পৌরসভা বিভিন্নভাবে ঐহিত্য ম-িত। দর্শনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার আড়াই যুগ ধরধর। এরই মধ্যে দর্শনা পৌরসভাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়েছে। বারবার হয়েছে ক্ষমতার সিংহাসন বদল। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তঘেষা স্রোতশীনি ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে একমাত্র শিল্প শহর দর্শনা। এ শহরের রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম কেরুজ চিনিকল ও ডিস্টিলারি কমপে¬ক্স, একটি আন্তর্জাতিকসহ দুটি রেলস্টেশন, স্থলবন্দর ইয়ার্ড, কাস্টসম সার্কেল কার্যালয়, চেকপোস্ট, সরকারি কলেজ, উপজেলা পশু হাসপাতাল, পৌর মার্কেট, দুটি বাজার, থানা, ও সরকারি বে-সরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কেরুজ চিনিকল, দর্শনা মেমনগরে নীলকুঠির, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রেও দর্শনার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসিহীম। দর্শনায় সবকটি রাজনৈতিক দলের জেলার শীর্ষ নেতাদের অবস্থান এ শহরে। সবমিলিয়ে জেলার মধ্যে দর্শনার গুরুত্বের কোনো কমতি নেই। এ গুরুত্বের কথা ভেবেই তৎকালীন সমাজসেবকরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নিত করে দর্শনাকে। ১৯৯১ সালের ২৭ নভেম্বর দর্শনাকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয় পরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন পৌর প্রসাশকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দামুড়হুদা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা প্রয়াত আক্তারুল ইসলাম আক্তার। ১৯৯৭ সালে পৌরসভার ২য় নির্বাচনে হয় রদবদল। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আ.লীগ নেতা মতিয়ার রহমান। তিনি পরপর দুবার আক্তারুল ইসলামকে পরাজিত করে পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি পৌরসভার ৪র্থ নির্বাচনে মতিয়ার রহমানকে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মহিদুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই খানেকটা অগেভাগেই নীবর প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সাম্ভাব্য প্রার্থীরা। সবশেষ দর্শনা পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। সে হিসেবমতে চলতি বছরেই এ পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। সে মোতাবেক আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা এখনো ঘোষণা হয়নি। এরই মধ্যে দর্শনা পৌর নির্বাচনে বৃহত্তর দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি সমর্থন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক থাকলেও আ.লীগের মতিয়ার রহমান ছাড়া কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কে কে দলের টিকিট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা সময়ের অপেক্ষামাত্র। আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান মেয়র দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান। মতিয়ার রহমান জানান, দল থেকে তাকে সমর্থন করলে তিনি পৌরসভার উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মহিদুল ইসলাম জানান, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো আগ্রহ এখন পর্যন্ত নেই। তবে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দিলে এবং সেসময় তিনি সুস্থ থাকলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম খোকন, দর্শনা পৌর যুবদলের সভাপতি এনামুল হক শাহ মুকুল, যুবদল নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাহারুল ইসলাম, সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র শরীফ উদ্দিন, ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল¬াহ আল মামুন রিংকু, যুবদল নেতা জালাল উদ্দিন। অভিন্ন ভাষায় বিএনপির এ সাম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, দল থেকে মনোনয়ন দিলে আগামী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন বিএনপি প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রার্থীদের নাম শোনা যায়নি এখনো পর্যন্ত। এদিকে ভোটের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ না হলেও প্রার্থীদের মধ্যে নীরব প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা।