স্টাফ রিপোর্টার: দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক হাশেম রেজার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর। ওসি লুৎফুল কবীরকে মোবাইলফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তুলে থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করা হয়। গত সোমবার রাতে পৃথক সময়ে ২৯৯ ও ৩০২ নম্বরে এ দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। একইসাথে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফুল কবীর ও হাশেম রেজার মধ্যকার কথোপকথনের দুটি কল রেকর্ড হাতে পাওয়া গেছে। সেখানে মোবাইলফোনের অপর প্রান্ত থেকে হাশেম রেজার গলার স্বরে হুমকিমূলক নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা গেছে। হাশেম রেজা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও দামুড়হুদা উপজেলার কুড়–লগাছির গ্রামের সন্তান।
প্রথম জিডিতে ওসি লুৎফুল কবির উল্লেখ করেছেন, ‘আমি ইন্সপেক্টর (নি.) এ.এইচ.এম লুৎফুল কবীর অফিসার ইনচার্জ, দর্শনা থানা, এই মর্মে নোট প্রদান করছি যে, ৬ জুন রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে আমার সরকারি ০১৩২০-১৪৮২৭৩ মোবাইল নম্বরে ০১৭১৫-৪৭৪৭৭৯ এই নম্বর থেকে কল আসে। কলদাতা আমাকে ফোন করে জানান যে দর্শনা পৌরসভাধীন শ্যামপুর মল্লিকপাড়ায় সংবাদদাতাদের পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন গালিগালাজসহ হুমকি-ধামকি প্রদান করছে। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে আমি এসআই নীতিশ বিশ্বাসকে ফোর্সসহ প্রেরণ করি। আমার প্রেরণ মতে এসআই নীতিশ বিশ্বাস উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশনা প্রদান করে থানায় চলে আসে। ইতোমধ্যে রাত ৯টা ৪২ মিনিটে দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও কুড়–লগাছি গ্রামের সন্তান জনৈক হাসেম রেজা আমার সরকারি মোবাইল ০১৩২০-১৪৮২৭৩ নম্বরে তার ০১৭১১-১৩৫৫১৭ নম্বর দিয়ে কল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাজে ব্যবহার করে এবং বলে যে, এসআই নীতিশ বিশ্বাস তার বোন মোছা. লিজা খাতুনকে গালিগালাজ করেছে। এর বিচার না করলে হাসেম রেজার কী ক্ষমতা আছে তা বোঝা যাবে। এমনকি সে বলে আমরা পুলিশে চাকরি করে আর সে করায়। তবে হাশেম রেজার বোন মোছা. লিজা খাতুন তার ০১৯৫৩-৭৪২০০৬ নম্বর দিয়ে এসআই নীতিশ বিশ্বাসের ০১৯৭৯-০১৯২২০ নম্বরে ফোন করে বলে তাকে কোনো ধরনের গালিগালাজ বা বাজে ব্যবহার করা হয়নি।’
দ্বিতীয় জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৬ জুন রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে আমার সরকারি মোবাইল ০১৩২০-১৪৮২৭৩ নম্বরে ০১৭১৫-৪৭৪৭৭৯ নম্বর থেকে কল আসে। কলদাতা আমাকে ফোন করে জানান যে, দর্শনা পৌরসভাধীন শ্যামপুর মল্লিকপাড়ায় সংবাদদাতাদের পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন গালিগালাহসহ মারধর করার হুমকি-ধামকি প্রদান করছে। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে এসআই নীতিশ বিশ্বাসকে ওই স্থানে প্রেরণ করলে এসআই নীতিশ বিশ্বাস শ্যামপুর মল্লিকপাড়ায় গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য বলে থানায় চলে আসে। সংবাদ দাতার বিবাদী পক্ষ ‘দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক’ এবং দর্শনা থানাধীন কুড়–লগাছি গ্রামের হাসেম রেজার বোন। কেন হাসেম রেজার বোনের বাড়িতে পুলিশ গেল সে জন্য হাসেম রেজা তার মোবাইল নম্বর ০১৭১১-১৩৫৫১৭ হতে অফিসার ইনচার্জ দর্শনা থানার সরকারি মোবাইল নম্বর ০১৩২০-১৪৮২৭৩ তে ফোন দিয়ে এসআই নীতিশ বিশ্বাসের বিচার চায় এবং বলেন যে, হাসেম রেজার কী ক্ষমতা তা আজ বোঝা যাবে। এমনকি হাসেম রেজা আমরা পুলিশের চাকরি করি আর হাসেম রেজা চাকরি করায় বলে ফোনে কথাবার্তা বলে। এ বিষয়ে হাসেম রেজার কল রেকর্ড পুলিশ সুপার মহোদয়কে প্রদান করে বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ করি।
পরবর্তীতে ৭ জুন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে পুনরায় দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক হাসেম রেজা তার মোবাইল ০১৭১১-১৩৫৫১৭ হতে অফিসার ইনচার্জ দর্শনা থানার সরকারি মোবাইল নম্বর ০১৩২০-১৪৮২৭৩ তে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করে। হাসেম রেজা বলেন, তিনি দুটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক। কেন পূর্বের কথোপকথন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে এবং উত্তেজিত হয়ে বলে আমি অফিসার ইনচার্জের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়, বিএনপি-জামায়াতের এলাকার এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে চাকরি হয়েছে। হাইকোর্টে মামলা করবে এবং হাইকোর্টের কাঠগড়ায় উঠিয়ে ছাড়বে। কীভাবে চাকরি করে সেটা দেখে নেবে। এছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে দুটি জাতীয় পত্রিকায় লিখবে এভাবে মোবাইল ফোনে হুমকি প্রদান করে।’
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবির বলেন, দর্শনা পৌর এলাকার অন্তর্গত শ্যামপুর মল্লিকপাড়ায় দুটি বিবাদমান পরিবারের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হচ্ছে, এমন খবর আমি মোবাইল ফোনে পাই। এরপর আমি বিষয়টি তদন্তে তাৎক্ষণিকভাবে আমার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নীতিশ বিশ্বাসকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। এরপর আমার পুলিশ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মিটিয়ে আসে। কিন্তু এরপর ওই ঘটনার জের ধরে নিজেকে দুটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দিয়ে হাশেম রেজা নামে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দেন এবং তার বোনের বাড়িতে কেন পুলিশ পাঠিয়েছি তা জানতে চান এবং আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং নানা হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। এরপর বিষয়টি আমি আমার পুলিশ সুপার স্যারকে জানায় এবং জনৈক হাশেম রেজা আমাকে যে দুই বার ফোন দিয়েছেন, সেই সময় আমি নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
তবে হাশেম রেজার দাবি করে বলেন, ‘ওসিকে কোন ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়া হয়নি। বরং ঘটনার ব্যাপারে জানতে চেয়েছি। কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার বোনের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশ গিয়ে কেন অশালীন ভাষা ব্যবহার করবে তার জবাব চাওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, হাশেম রেজা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি প্রায় সময়ই পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এটি নতুন ঘটনা নয়। দর্শনা থানার ওসির সাথেও একইভাবে খারাপ ব্যবহার করেছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।