মাহফুজ মামুন: জীবননগরে শ্বাসকষ্ট বা ঠা-া-জ্বর থাকা রোগীদের ফ্লু কর্ণারে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের নমুনা নেয়ার জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাদের দ্রুত শনাক্ত করে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা হচ্ছে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৮ জন। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৪ জন রোগী। এর আগে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জীবননগর শাখার ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা পজেটিভ হয়। জীবননগর পৌর এলাকার কয়েকটি পাড়ায় করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। লকডাউন শেষ হওয়ার পর বাড়েনি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জীবননগর উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। অথচ অন্যান্য উপজেলায় অনেক আগেই শতাধিক ছাড়িয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
জীবননগরে করোনা পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসাদের প্রথম চিহ্নিত করা হয়। তারপর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়। ইসলামী ব্যাংক থেকে সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সে সময় রোগী বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সঠিক সময়ে নেয়ায় সুফল পান জীবননগর উপজেলার প্রত্যেকটি মানুষ। ফলে জীবননগর উপজেলায় কয়েক দিনে নতুন কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হননি।
জীবননগর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪২ জন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পৌর এলাকায় রয়েছেন ১৩ জন রোগী। ১নং ওয়ার্ডে একজন, ৩নং ওয়ার্ডে একজন, ৪নং ওয়ার্ডে দুজন, ৬নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৫ জন ও ৮নং ওয়ার্ডে একজন। তবে, ২নং, ৫নং ও ৯নং ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি। জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪২ জন আক্রান্ত রোগী মধ্যে রয়েছে হাসপাতালপাড়া, মধুমতি ব্যাংক, কাজিপাড়া, থানা মোড়, পোস্ট অফিসপাড়া, দৌলতগঞ্জ, বাঁকা, মনোহরপুর, শাপলাকলিপাড়া, বেনিপুর, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জীবননগর শাখা, খয়েরহুদা মন্ডলপাড়া, কয়া গ্রাম, আলিপুর ও পাঁকা গ্রাম।
জীবননগর উপজেলায় সর্বশেষ ২০ জুলাই ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জীবননগর থেকে এ পর্যন্ত ৪২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। ১৮টি রিপোর্ট আসতে এখনও বাকি রয়েছে। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪ জন রোগী।
জীবননগর পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, পৌরসভার দুজন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলো। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন ইসলামী ব্যাংকে। এখন আগের চাইতে অবস্থা অনেক ভালো। মানুষ সতর্কতার সাথে চলাফেরা করছেন। পৌর পরিষদের সবাই করোনা প্রতিরোধের জন্য কাজ করছেন। হাতে গোনা কয়েকজন রোগী রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুলিয়েট পারউইন বলেন, জ্বর, ঠা-া, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা রোগীগুলো হাসপাতাল থেকে ফেরত দেয়া হয় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফ্লু কর্ণারে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সবধরনের রোগীরা সেবা পাওয়ার কারণে করোনা ঝুঁকি কম রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলছি। জীবননগরে করোনা ভাইরাসের বিস্তার তুলনামূলক কম রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেই বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে। রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করছি। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো কি অবস্থায় আছে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। যাদের খাবারের প্রয়োজন হচ্ছে তাদের বাড়িতে পৌছে দেয়া হচ্ছে।