জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের একটি মাঠে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করার নামে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ৪টায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে এক্সিভেটর ফেলে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করার মূলহোতা মাটি খেকো বহু অভিযোগে অভিযুক্ত সেনেরহুদা গ্রামের বসতিপাড়ার মৃত শওকত আলীর ছেলে আলী আকুব্বরসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যান। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থল থেকে একটি মাটি খনন করার যন্ত্র এক্সিভেটর জব্দ করেন এবং জব্দকৃত এক্সিভেটর উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের জিম্মায় (হেফাজতে) রেখে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া অভিযুক্ত আলী আকুব্বরকে আজ (সোমবার) জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল ভ্রাম্যমাণ আদালতের সার্বিক সহযোগিতা করেন। অভিযোগ রয়েছে এর আগেও আলী আকুব্বর ইটভাটায় অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে বহু অভিযোগে অভিযুক্ত আলী আকুব্বর বেশ কিছুদিন ধরে সরকারি অনুমতি ছাড়াই ওই গ্রামের দিঘড়ির মাঠে আবাদি কৃষি জমি থেকে এক্সিভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন ইটেরভাটায় বিক্রি করে আসছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত ৫০-৬০টি মাটি বোঝাই ট্রাক্টর বেপরোয়া গতিতে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা করছে। এতে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে বিষয়টি জীবননগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিনের কাছে অভিযোগ করেন। গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল সোমবার অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে আলী আকুব্বরসহ তার সহযোগীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারিক হাকিম মো. মহিউদ্দিন জানান, অবৈধভাবে কেউ কৃষি জমির মাটি কেটে এবং পুকুর খননের নামে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সেনেরহুদা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, আলী আকুব্বর ক্ষমতার দাপট এবং গায়ের জোরে মাঠের মধ্যে অবৈধভাবে আবাদি কৃষি জমি থেকে এক্সিভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করে দির্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ইটের ভাটায় তা বিক্রি করছে। এ কারণে পার্শবর্তী কৃষি জমিগুলো ভেঙে গেছে এবং বাকী জমিগুলোও হুমকির মধ্যে পড়েছে। এ ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা প্রতিবাদ করলে আলী আকুব্বরসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে। ফলে আলী আকুব্বরের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উথলী বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, অভিযুক্ত আলী আকুব্বর প্রতিদিন ট্রাক্টরে ওভার লোডিং মাটি নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করায় সদ্যনির্মিত পাঁকা রাস্তা দেবে যাচ্ছে এবং রাস্তার পাশের অংশ ভেঙে যাচ্ছে।
এছাড়া কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করার নামে মাটি উত্তোলন করায় ফসলি জমি, জনবসতি এবং রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে। বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তায় শিশু ও বৃদ্ধদের অবাধ যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে।
এছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে, মাটি বহনে নিয়োজিত ট্রাক্টরগুলো রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াতের পথে বাণিজ্যিক, আবাসিক, জনবহুল এলাকাসহ সড়ক পথে শব্দ ও পরিবেশ দূষণ করে পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আলী আকুব্বরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, সেনেরহুদা গ্রামের কানাপুকুর মাঠে দেড় বিঘা সরকারি খাস জমি নিজের দখলে রেখে দির্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছে।
এছাড়াএ অভিযোগ রয়েছে উথলী গ্রামের আকবর তার উথলী মোল্লাবাড়ি মাঠে অবস্থিত পুকুর সংস্কারের নামে প্রতিদিন এক্সিভেটর মেশিন দিয়ে ৫০-৭০ ট্রাক মাটি ও বালি উত্তোলন করে কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি পিয়াস ব্রিকসে বিক্রি করছে।
সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব পুকুর খনন করার নামে ভূমিদস্যুদের মাটি ও বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা।