স্টাফ রিপোর্টার: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এ দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এ দিনটির স্মরণে মাজার জিয়ারত, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা ও খাদ্য-বস্ত্র বিতরণের ১২ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যদিয়ে সেনাবাহিনীপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী থানার বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটা সময় গ্রামে কাটিয়ে তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ ভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে অধিক খেতাব লাভ করেন তিনি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য তিনি নিজেও একটি পিস্তল উপহার পান। সৈনিক জীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সব সংকটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। জাতির ভাগ্যাকাশে তখন এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিলো। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় ছিলো যে, প্রকৃতপক্ষে সে সময় দেশে কোনো সরকার ছিলো না। কোথা থেকে কী হচ্ছে তা জানতে পারছিলেন না কেউ। চারদিকে এক অনিশ্চয়তা-বিশৃঙ্খলার মধ্যে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিলো পুরো জাতি। ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন। এরপর থেকে জিয়াউর রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি শুধুই এগিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দৃঢ় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, নির্লোভ, নির্মোহ, গভীর দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণ দিয়ে তিনি জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থিরা স্থান পান তেমনি চরম ডানপন্থিরাও জায়গা করে নেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থি দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন তিনি, যা বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রয়োজন ছিলো। জিয়াউর রহমান বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন। রাজনীতিবিদদের তিনি জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বাধ্য করেন। বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করে জনগণের মধ্যে তিনি সাড়া জাগান। মাত্র ৬ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পান শহিদ জিয়া। কিন্তু এ ছয় বছরেই তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেন। স্বজনপ্রীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনসহ নানা অপকর্মে জাতির যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান শক্ত হাতে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তিনি সমগ্র জাতির মধ্যে এক নবজাগরণের সূচনা করেন। সাদামাটা জীবনযাপনের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ কেন সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। তার চরিত্রে কোনো কপটতা ছিলো না। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে জিয়াউর রহমান যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, বিশ্বে দ্রুততম অগ্রসরমান দেশ হিসেবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে প্রাণ হারান বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এ রাষ্ট্রনায়ক। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার স্মরণকালের জানাজায়। সেদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিলো- ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী এবার একটু ভিন্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে।
কর্মসূচি: দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ থেকে ১২ দিনের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। শাহাদতবার্ষিকীর দিনে আজ ভোর ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও কালো পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বেলা ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জিয়াউর রহমানের মাজারে পূষ্পার্ঘ অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন গণমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- স্বাধীনতা যুদ্ধ ও শহিদ জিয়া, গণতন্ত্র, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বিএনপি, শহিদ জিয়া, উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি, স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও অর্থনৈতিক সংস্কার, শহিদ জিয়া ও কৃষি বিপ্লব, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু কল্যাণ, কর্মসংস্থান ও শ্রমিক কল্যাণ, শিক্ষা ও গণশিক্ষা, পল্লী বিদ্যুত ও খনিজসম্পদ উন্নয়ন, শহিদ জিয়ার বিদেশনীতি ও শহিদ জিয়ার যুব উন্নয়ন।