স্টাফ রিপোর্টার: প্রতি কেজি আমন ধান বীজের মূল্য ৪৫ টাকায় উন্নীত করণের দাবিতে বিএডিসির তালিকাভুক্ত চাষিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিএডিসির তালিকাভুক্ত চাষিরা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। ধানবীজের মূল্য নুন্যতম ৪৫ টাকা নির্ধারণের দাবি করে বিএডিসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে লিখিভাবে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। বক্তারা বলেন, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ প্রতি কেজি প্রত্যায়িত-মানঘোষিত আমন বীজের মূল্য মোটাধান ৩৮ টাকা এবং চিকনধান ৩৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। এতে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রতি কেজি আমন ধান বীজের মূল্য ৪৫ টাকায় উন্নীত করতে দাবি জানানো হচ্ছে।
আন্দোলনকারী কৃষকরা জানান, গত বছর ধানের ক্রয়মূল্যে ছিলো ৮৫০ টাকা মণ। এবছর ক্রয়মূল্যে বেড়ে মোটা ধান ১৪শ’ টাকা মণ ও চিকনধান ১৪৫০ টাকা মণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, প্রতিকেজি ধান উৎপাদনের খরচ হয় ২ টাকা ৮০ পয়সা। করোনকালীন সময়ে সরকার বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিলেও বিএডিসির কৃষকরা এর আওতায় বহির্ভূত। উপরোন্ত বর্তমান বাজার দর তুলনায় বিএডিসি কর্তৃক আমন বীজের সংগ্রহ মূল্যে নিতান্তই কম হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ধানের মূল্যে বৃদ্ধির কারণে বিএডিসি নির্ধারিত মূল্যে ধানবীজের দাম দিলে কৃষকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার দৌলাতদিয়াড়ে বিএডিসির বীজভবন চত্বরে বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি ফোরামের ডাকে এই আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা ১১টায় বিএডিসির দৌলাতদিয়াড় বীজ ভবনের ফটকে চাষিরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। টানা একঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা বীজভবন চত্বরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সংগঠনের সভাপতি মো. সালাহউদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দ এসময় বক্তব্য রাখেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ বর্ষে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চুয়াডাঙ্গায় ৩ হাজার মেট্রিক টন আমন ধানবীজ ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধানবীজ ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। ধানবীজ ক্রয় করা হয়েছে ৩ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ধানবীজ ক্রয় শুরু হয় এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ধান বীজক্রয়ের শেষদিন ছিলো। ধানবীজ ক্রয়ের মধ্যে বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স বীজ কেন্দ্র ১৪৯০ মে.টন, উন্নততর বীজ কেন্দ্র ৮৫১ মে. টন এবং আপদকালীন বীজ কেন্দ্র ৭১৯ মে. টন ধানবীজ সংগ্রহ করেছে। মানঘোষিত ধানবীজের আর্দ্রতা থাকতে হয় শতকরা ১২ ভাগ। বিএডিসির ৩ হাজার ৮৯৩ জন চুক্তিবদ্ধ চাষি ১২ হাজার ৭২১ দশমিক ৭০ একর জমি ৪৯২টি স্কীমের মাধ্যমে আউশ, আমন, বোরো, গম ও ভুট্টা উৎপাদন করে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির উপ-পরিচালক (বীজ উৎপাদন) মো. শামীম হায়দার জানান, চলতি মরসুমে প্রায় ৪ হাজার কৃষকের কাছ থেকে ৩ হাজার মেট্রিকটন আমন ধানবীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঠানো এক চিঠিতে জাত ওয়ারী এবার আমন ধানবীজের মূল্য ৩৮ টাকা ও ৩৯ টাকা দর নির্ধারণ করে পত্র দিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি বিএডিসির প্রকল্প পরিচালক বরাবর এক চিঠিতে ধানবীজের ক্রয় মূল্য ৪৩ টাকা ও ৪৪ টাকা প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো। কৃষকদের দাবি ধানের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় দাম না বাড়ালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আন্দোলনের বিষয়টি মৌখিকভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে বিএডিসি কর্তৃক আমন ধানের বীজ সংগ্রহ মূল্য বর্তমান বাজার তুলনায় কম মূল্য নির্ধারণ করায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে মেহেরপুরের কৃষকরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে হাসপাতাল সড়কের বিএডিসি অফিস কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি ফোরাম। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বল্টু। বক্তব্য রাখেন বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ, ইউপি সদস্য মশিউর রহমান ডাবলু, চাষি কিতাব আলী, আকতার হোসেনসহ বিভিন্ন বীজ তৈরি করা চাষিরা।
প্রসঙ্গত: বিএডিসি ২০১৯-২০২০ বর্ষে কৃষকদের কাছে থেকে আমনধান বীজ ৩২ টাকা ও ৩১ টাকা দরে ক্রয় করে। গত বছরে ধানের বাজার মূল্য ছিলো ৮৫০ টাকা। এবার ধানের বাজার মূল্য ১৪০০ টাকা থেকে ১৪৫০ টাকা পর্যন্ত।