ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ৬ বছর পর শিশু শিহাব হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার করেছে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসি তোয়াজ উদ্দীনের শিশু সন্তান শিহাব নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের দুই দিন পর ৩০ অক্টোবর শিহাবের লাশ পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী শিবপুর গ্রামের ওসমান আলীর জমিতে। এ ঘটনায় নিহতর মা বিলকিস খাতুন ৬ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সর্বশেষ পুলিশ হেড কোয়াটারের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে হত্যার প্রধান আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়ে আদালতে ক্রটিপূর্ণ ও দায়সারা চার্জশিট প্রদান করে। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদী আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করলে মামলাটি নতুনভাবে তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গার বিজ্ঞ আদালত ঝিনাইদহ পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই তহিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার নিয়ে হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারের পর প্রধান আসামি ও তার সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। দায় স্বীকার করে আদালতে তারা সেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন শিহাব বাড়ির পাশে ইমরানের দোকানে মিষ্টি কিনতে যায়। ফেরার পথে আসামি নয়ন শিহাবকে তার চাচাতো ভগ্নিপতি জমির উদ্দীন পিন্টুর কাছে নিয়ে যায়। পিন্টু ৫০০ টাকা নয়নকে দিয়ে শিহাবের বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে শাসিয়ে দেয়। পিন্টুর ঘরে শিহাবকে আটকে রেখে চক্রটি গ্রামে নিখোঁজ মাইকিং করে। কুতুবপুর গ্রামের শ্রী অসিত কুমারের ভ্যানযোগে কলম ও শাহাবুদ্দীন এই প্রচার কাজে অংশ নেয়। পরিকল্পনা মাফিক রাতে প্রধান আসামি লাল্টু শিশু শিহাবের মালয়েশিয়া প্রবাসি পিতা তোয়াজ উদ্দীনের কাছে মুক্তপণ দাবি করার পরিকল্পনা নেয়। এ সব দেখে শিশু শিহাব কান্নাকাটি শুরু করলে লাল্টু শিহাবের কানে জোরে থাপ্পড় মারে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শিহাব। চাচাতো ভগ্নিপতি পিন্টুর ঘরের মধ্যে শিশু শিহাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর অসিতের পাখিভ্যান যোগে লাশ শিবপুর গ্রামের মাঠে ফেলে আসে। লাশ টানার কাজে ব্যবহৃত পাকিভ্যানটিও পিবিআই উদ্ধার করেছে। ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই তহিদুল ইসলাম মঙ্গলার বিকালে জানান, মূলত শিশু শিহাবের প্রবাসি পিতার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার জন্যই অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ মামলার মূল আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছিলো। পিবিআইয়ের তদন্তে এজাহারের বাইরে আরো তিনজন আসামির সন্ধান মেলে। এসআই তহিদুল জানান, মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর গত ২ মে প্রধান আসামি শিবপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে লাল্টুকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সমোশপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ৩ মে কুতুবপুর গ্রাম থেকে জিয়ারত আলীর ছেলে জমির উদ্দীন পিন্টু ও ১৩ জুন মথুর দাসের ছেলে অসিত দাসকে একই গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন বলে এসআই তহিদুল ইসলাম জানান। ৬ বছর পর শিশু শিহাব হত্যার প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পেরে ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের আরেকটি সাফল্য বলে তিনি দাবী করেন।