চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে তরুণকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার

প্রেমিকাকে নিয়ে পালানোর সময় ধরা : পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয় কবরস্থানে

স্টাফ রিপোর্টার: গত দুদিন আগে প্রেমিকা উর্মির সঙ্গে দেখা করতে কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরে আসেন শরিফুল ইসলাম শান্ত নামের এক যুবক। দুদিন প্রেমিকাকে নিয়ে ঘোরাঘুরির পর গত শুক্রবার রাতে উর্মিকে নিয়ে পালানোর কথা ছিলো। সেই রাতে পালানোর সময় প্রেমিকার পরিবারের সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে যায় তারা। পরে প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা শরিফুল ইসলাম শান্তকে বেধড়ক পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে ফেলে রাখে। পরদিন সকালে অর্থাৎ গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কবরস্থানের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শরিফুল ইসলাম শান্ত (২৩) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ভিলিজারপাড়া গ্রামের ফজল করিম ও হোসনে আরা বেগম দম্পতির ছেলে। শরিফুলের পরিবারকে মোবাইলফোনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। আর্মি ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, গত দুদিন আগে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শরিফুল ইসলাম শান্ত চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় (বয়স বিবেচনায় প্রেমিকার ঠিকানা প্রকাশ করা হলো না) প্রেমিকা উর্মির সঙ্গে দেখা করতে আসেন। গত দুদিন ঘুরাঘুরি শেষে শুক্রবার রাতে প্রেমিকা উর্মিকে নিয়ে পালানোর কথা ছিলো। তবে পালানোর সময় প্রেমিকার পরিবারের সদস্যদের হাতে ধরা পড়লে তারা শান্তকে পিটিয়ে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে ফেলে রাখেন। আর্মি ক্যাম্প সূত্রে আরও জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম শান্ত বাংলাদেশ আর্মির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তার নিকট থেকে পাওয়া আইটেমগুলো চট্টগ্রাম আর্মি স্টোর থেকে কেনা হয়েছে। এর আগে, শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া শীতের পোশাক দেখে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিলো তিনি সেনাসদস্য হতে পারেন। যুবককে উদ্ধারের পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানিয়েছিলেন, শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পারি জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানের বাগানের মধ্যে হাত-পা বাঁধা ও অচেতন অবস্থায় এক ব্যক্তি পড়ে আছেন। পরে আমিসহ পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর একটু সুস্থতাবোধ করলে নিজের নাম শরিফুল ইসলাম শান্ত বলে জানান তিনি। নিজেকে একজন সেনাবাহিনীর সৈনিক বলে দাবি করেন। তার কর্মস্থল খুলনায় ও বাড়ি চট্রগ্রামে বলে জানিয়েছেন তিনি। ওসি খালেদুর রহমান আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর মনোগ্রামযুক্ত শীতের পোশাক (ট্রাকসুট) ও জ্যাকেটের একটা পাট (গলায় মাফলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়) পাওয়া গেছে। হাতে থাকা ঘড়িটিও সেনাবাহিনীর মনোগ্রামের রঙের সঙ্গে মিল রয়েছে। এছাড়া, তার প্রাথমিক আলামত ও চুলের কাটিং দেখে ধারণা করা হচ্ছে সেনাসদস্য হতে পারেন। যাচাই করার জন্য বিজিবি ও সেনাসদস্যদের জানানো হয়েছে। বিজিবি যাচাই করে জানিয়েছেন এই যুবকের সঙ্গে বিজিবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা আর্মি ক্যাম্প থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ আর্মির সঙ্গে উদ্ধার হওয়া যুবকের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রেমিকাকে নিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। পরে প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা তাকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে কবরস্থানে ফেলে রেখে যায়। বিকেলে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় ওই তরুণ শয্যায় শুয়ে আছেন। শরীরে স্যালাইন চলছে। পাশে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় সেনাবাহিনীর দু’জন, শফিকুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসক মেহবুবা মুস্তারিন নার্সদের নিয়ে তদারকি করছেন। শরিফুল ইসলামের ভাই আবু তালেব মোবাইলফোনে বলেন, শরিফুল সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে বাড়িতে জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার কথা বলে মাসখানেক আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এ জন্য মা-বাবার কাছ থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা নেন। পরে মোবাইলফোনে নানা খরচের কথা বলে আরও টাকা নেন। তবে চুয়াডাঙ্গায় কেন এসেছেন এবং কার সঙ্গে এসেছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।