চুয়াডাঙ্গায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

ডোমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ৬ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এক প্রবাসীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। সদর উপজেলার পিরোজখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত শাহিনুর বেগম ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী মতিয়ার রহমানের স্ত্রী। গতকাল বুধবার তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এমনিতেই তার পরিবার ঋণগ্রস্ত। তার ওপরে শাহিনুরের পরিবারের কাছ থেকে ডোম জোরপূর্বক আদায় করেছে ৬ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, পিরোজখালী গ্রামের রমজান আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান বছর পাঁচেক আগে দুবাই যান। সেই সময় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে টাকা তুলে তাকে দিয়েছিলন। সেই টাকা পুরোপুরি পরিশোধ করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েন মতিয়ারের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী শাহিনুর বেগম (৩০)। বিভিন্ন এনজিও ঋণের কিস্তির জন্য চাপ দিতে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তিও তাদের পাওনা চায়। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে শাহিনুর বেগম মঙ্গলবার গলায় ফাঁস দেন। রাজশাহী নেয়ার পথে ওইদিনই তার মৃত্যু হয়। শাহিনুরের শ্বশুর রমজান আলী বলেন, ‘টাকা মোটামুটি পরিশোধ করা হচ্ছিল। কিন্তু ৬-৭ মাস যাবত কাজ বন্ধ হয়ে যায় ছেলের। এ কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না শাহিনুর। তাই সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’ এদিকে, মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য জোরপূর্বক ৬ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডোম রাম প্রসাদের বিরুদ্ধে। পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, একেই বলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সরকারি হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য ডোমকে অতিরিক্ত টাকা কেন দিতে হবে? তারা শাহিনুরের পরিবারের নিকট প্রথমে ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ৬ হাজার টাকা নিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন। শাহিনুরের শ্বশুর রমজান আলী বলেন, আমার ছেলে মতিয়ায় পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন এনজিও এবং অন্যান্যদের নিকট টাকা ধার করে দুবাই যায়। এরমধ্যে সবার টাকা পরিশোধ করে আসছিল। গত ৬/৭ মাস যাবত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ঋণগ্রস্থদের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। তারা আমাদের বাড়িতে এসে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সবার অজান্তেই নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দেয় শাহিনুর। ঝুলন্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শাহিনুরের ভাই জহুরুল ইসলাম বলেন, ঋণ করে আমার বোনায় বিদেশে গিয়েছেন। সেই টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। কারণ কয়েকমাস যাবত তার কাজ বন্ধ থাকায় টাকা পাঠাতে পারছিলনা। পাওনাদারেরা বাড়িতে এসে চাপ দিচ্ছিলো। এ জন্যেই আমার বোন আত্মহত্যা করেছে।

এ বিষয়ে ডোম রাম প্রসাদ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই টাকা নেয়ার রেওয়াজ আছে।’   চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহব্বুর রহমান বলেন, ঋণগ্রস্থের কারণে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য এক টাকাও দেয়া লাগেনা। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comments (0)
Add Comment