চুয়াডাঙ্গার লাইব্রেরিগুলোতে বডিরেটে বই বিক্রি, কম দামে বেচলে জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বইয়ের বাজারে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই বিক্রিতেও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। কোনো লাইব্রেরি নির্ধারিত মূল্যের কম দামে বই বিক্রি করলেই গুণতে হয় জরিমানা। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করেন কমিটির চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতিসহ কমিটির প্রভাবশালী কয়েকজন। বছরের পর বছর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রেখেছেন তারাই। চুয়াডাঙ্গায় বছরান্তে কমিটির সাধারণসভা হলেও এখানে কারোর কিছু বলার থাকে না। নির্বাচন ছাড়াই বারবার একই ব্যক্তিরা প্রধান পদগুলো দখল করে বইয়ের বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এতে প্রতিনিয়ত ঠকছে সাধারণ বই ক্রেতারা। গত বছরেও ১৫ ভাগ ছাড়ে বই বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার বইয়ের মূল্যতালিকা অনুযায়ীই বই কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একই সাথে বইয়ের মূল্যও বাড়ানো হয়েছে দুই-তিন গুণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার লাইব্রেরিগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই। তবে কৌশলে নোট-গাইডের পরিবর্তে বইয়ের কভারে লেখা হয়েছে সহায়ক বই। স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসব সহায়ক বই কিনে থাকে। অনুপম, লেকচার, অক্ষরপত্র, জুপিটার, আশার আলো, রয়েল, পাঞ্জেরীসহ বেশকিছু প্রকাশনীর বই চুয়াডাঙ্গার বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু এসব বই পাইকারি বিক্রি করে চুয়াডাঙ্গার ‘পুঁথিঘর লাইব্রেরি’ ও হামিদিয়া লাইব্রেরি। লাইব্রেরি দুটির স্বত্বাধিকারী যথাক্রমে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। চুয়াডাঙ্গা জেলার ১০৭’র অধিক লাইব্রেরির মালিক ওই দুই লাইব্রেরি থেকে পাইকারি বই কেনেন। তাই বইয়ের বাজারের দাম-দর ও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লাইব্রেরির মালিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘আমরা এর আগে কিছু ছাড় দিয়ে সাধারণ ক্রেতার কাছে বই বিক্রি করতাম। কিন্তু এ বছর থেকে আমরা পাচ্ছি না। বইয়ের বডিরেটের বাইরে এক টাকা কম নিলেও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়। প্রথমবার পাঁচ হাজার, দ্বিতীয়বার ১০ হাজার এবং তৃতীয়বার ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে সমিতি। চতুর্থবার কম দামে বিক্রি ধরা পড়লে লাইব্রেরির লাইসেন্স বাতিল হয়। এসব তদারকির জন্য সমিতির নিজস্ব টাস্কফোর্স আছে। তাই আমরা জরিমানা গোনার ভয়ে এক টাকাও ছাড় দিতে পারি না। চুয়াডাঙ্গা শহরের আরেকজন বই বিক্রেতা জানান, ‘বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি চুয়াডাঙ্গা শাখার কোনো নির্বাচন হয় না। বছরের পর বছর একই ব্যক্তিরা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। বছরান্তে সাধারণ সভায় এক প্যাকেট খাবার দিয়েই সমস্ত আয়-ব্যয় পাস করিয়ে নেন তারা। আমাদের কিছুই বলার থাকে না।

চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার একজন অভিভাবক বলেন, কাজল ব্রাদার্স লিমিটেডের তৃতীয় শ্রেণির একটি সহায়ক বইয়ের নাম ‘একের ভেতর সব’। গত বছর বইটির মূল্য ছিল সাড়ে তিনশ’ টাকা। এবার বইটির দাম দেওয়া হয়েছে ৫২০ টাকা। গত বছর ১৫ ভাগ ছাড়ে বইটি পাওয়া গেলেও এবার বডিরেটেই বিক্রি করছে লাইব্রেরিগুলো। এ ব্যাপারে জেলা শহরের মোহাম্মদী লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘বডিরেট অনুযায়ীই আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। লাভ বেশি হয় না, তাছাড়া কম নিলেই আমাদের জরিমানা করে সমিতি। একই অভিযোগ করেন মোল্লা লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী মোমিনুর ইসলাম। ‘এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি পুঁথিঘর লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তার মোবাইলের কল রিসিভ করেননি। তবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক হামিদিয়া লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল আল সুমন ও কোষাধ্যক্ষ বই নিকেতন লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বাবু মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘আমরা কোনো সিন্ডিকেট করিনি। এটা সমিতি কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কিছু কিছু বইয়ে এ বছরও কমিশনে বিক্রি করা হচ্ছে। আর টাস্কফোর্স বা জরিমানার বিষয়টিও কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে। সমিতির কমিটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সমিতি নিয়ম মেনেই চলে। আমাদের বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ সঠিক নয়।’

Comments (0)
Add Comment