হাফডজন প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ
নজরুল ইসলাম: ‘প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মহামারি শেষ কবে হবে’ বিশ্বজুড়ে এ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা হলেও এর মধ্যেই দেশে সময় ঘনিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের। আইন অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ইউপি নির্বাচন শুরু করতে হবে, আর শেষ করতে হবে জুনের আগেই। তার আগে চলতি বছর স্থগিত হওয়া এবং নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদগুলো নির্বাচন করতে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এ আভাসে চুয়াডাঙ্গার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নে আগেভাগেই ইউপি নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রার্থীরা এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে বিনিয়োগ। ইউনিয়নের সম্ভাব্য হাফডজন প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। যে সব প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আ.লীগের ৩ জন, বিএনপির ১ জন, জামায়াত ইসলামের ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজনের নাম বাতাসে ভাসছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবারও স্থানীয় নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। যদিও জামায়াত প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।
জানাগেছে, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ব্যাপক সীমানা এবং অর্ধলক্ষ জনগোষ্ঠির সেবা প্রদানে বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় সেবার মান মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে গঠিত হয় নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদ। যাতে করে মানুষ হাতের কাছে পায় নাগরিক সুবিধা। ইউনিয়ন বিভক্ত করতে গিয়ে দেখা দেয় আইনি জটিলতা। তিতুদহ ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে জটিলতা থাকলেও গড়াইটুপি ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে কেটে গেছে জটিলতা। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন স্থগিত হওয়া এবং নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ হাওয়া লেগেছে গড়াইটুপি ইউনিয়নে। চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহম্মেদ বলেন, আশা করছি চলতি মাসের মাঝামাঝিতে জেলার স্থগিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন তার পরপরই নবগঠিত ইউনিয়নগুলোতে আইনি জটিলতা না থাকলে যাতে নির্বাচন করা যায় সেলক্ষে প্রধান নির্বাচন কার্যালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। আর গড়াইটুপি ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে আইনগত কোনো জটিলতা নেই। নির্বাচন কমিশনের এমন আভাস পেয়ে গড়াইটুপি ইউনিয়নের সম্ভব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী কে বা কারা হচ্ছে তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। যদিও নির্বাচন এবং ভোট দেয়া নিয়ে শঙ্কা এবং প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। ইউনিয়ন ঘুরে ৬ জন সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম শোনাগেছে। যাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন (আ.লীগ) দলের ৩ জন, বিএনপির ১জন, জামায়াতের ১জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ জনের নাম। নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে স্থানীয় নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। সে হিসেবে জামায়াত বাদে আ.লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীকে দলীয় প্রতীকে ভোট করতে হবে। আর বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আলাদা প্রতীকে ভোট করতে হবে। ইউনিয়নের কয়েকজন ভোটার জানালেন, চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের ভোট এলে মার্কা দেখে হয় না। ভোট হয় প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ এবং লোকাল জনসমর্থন নিয়ে। এছাড়াও রয়েছে অর্থ, আত্মীয়করণ এবং এলাকার টান। দলীয় প্রতীক পেলেই যে চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন এমনটা কিন্তু না। এছাড়াও রয়েছে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মান অভিমান। অর্থ বিনিয়োগ করে এলাকাভিত্তিক প্রার্থী দাঁড় করিয়ে রাখা। অন্যের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত ফেলে খাওয়া। স্থানীয় ভোটে থাকে নানা রকম সমীকরণ। সবকিছু মোকাবেলা করে তারপর বিজয় মালা গলাই তোলা। তবে নিজেস্ব ভোট ব্যাংক ছাড়া টাকা কিংবা প্রভাব খাটিয়ে গোপন ব্যালটের ভোট পাওয়া দূরুহ ব্যাপার। এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কোরবানি ঈদ থেকেই আগাম বিনিয়োগ করতে শুরু করে দিয়েছেন ভোটারদের পেছনে। কেউ কেউ কোরবানির গোস্ত বিলি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সেমাই চিনি এবং নগদ অর্থ হাতে তুলে দিয়ে আগাম জানান দিয়েছেন আর দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সহযোগিতায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক প্রেরিত পত্র প্রাপ্তির পর স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৬৮৬ নং পত্রের নির্দেশক্রমে এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধন আইন ২০০৯ এর ১১ ধারা মোতাবেক জেলা প্রশাসকের ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে সংশি¬ষ্ট জেলা প্রশাসক ২৪ জুন ২০১৫ তিতুদহ ইউনিয়নকে বিভক্ত করে নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন নামে নতুন ইউনিয়ন এবং তিতুদহ ইউনিয়নকে পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি প্রেরণ করেন। তারই আলোকে ওই বছর ২৪ সেপ্টম্বর গেজেট প্রকাশিত হয়। নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের যে সমস্ত গ্রাম নিয়ে ওয়ার্ড গঠিত হয় তা হলো কালুপোল ১নং ওয়ার্ড, গোষ্টবিহার ও খেজুরতলা ২নং ওয়ার্ড, খাড়াগোদা ও জামালপুর ৩নং ওয়ার্ড, গড়াইটুপি ও বিত্তিরদাড়ি ৪নং ওয়ার্ড, তেঘরি ও কলাগাছি ৫নং ওয়ার্ড, গহেরপুর ৬নং ওয়ার্ড, বাটিকাডাঙ্গা ও সুজায়েতপুর ৭নং ওয়ার্ড, সড়াবাড়িয়া ও খাসপাড়া ৮নং ওয়ার্ড এবং গবরগাড়া ও ছিলন্দিপাড়া ৯নং ওয়ার্ড গঠিত হয়। আর এ ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে নারী পুরুষ মিলে প্রায় ১৭ হাজার। প্রায় ৪ বছর ধরে ইউনিয়ন ভাগাভাগি হলেও আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। শেষমেষ নবগঠিত গড়াইটুপি ইউপি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ফলে ইউনিয়নের প্রার্থী এবং ভোটাররা বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠেছে। যদিও প্রথম দিকে নির্বাচনের বাতাস শুরু হওয়ায় অনেকেই সভা সমাবেশ, দোয়া প্রার্থী, প্রচার প্রচারণা করে মাঠ গরম করে রেখেছিলো। আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া প্রার্থীরা ঝিমিয়ে পড়ে। আবারও গড়াইটুপি ইউনিয়নে নির্বাচন হতে যাচ্ছে এমন সংবাদে অনেক প্রার্থী গা ঝাড়া দিতে শুরু করেছেন। তবে দেরিতে হলেও যেনো আসছে তফশীলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এমনটায় প্রত্যাশা গড়াইটুপি ইউনিয়নবাসীর।