স্টাফ রিপোর্টার: কালবোশেখি ঝড়ের বাতাসে ঝিনাইদহে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গরম বাতাসে সবে মাত্র বের হওয়া ধানের শীষ সাদা-হলুদ বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাচ্ছে। এতে জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবারের ধানে চিটা বেশি এবং ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। ৪ এপ্রিল বিকেলে হঠাৎ ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে কালবোশেখি ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের আগে পরে বৃষ্টি না হলেও গরম হাওয়া বইতে থাকে। গরম হওয়ায় জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
চলতি ইরি-বোরো মরসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ধান রোপণ হয়েছে ৭৭ হাজার চারশত ৪০ হেক্টর। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পরই এসব জমির ধান কাটা শুরু হবে। এরই মধ্যে তাপদাহ ও ঝড়ে ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়ার জমির মধ্যে ঝিনাইদহ সদরে আট হেক্টর, কালীগঞ্জে ১০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে আট হেক্টর, মহেশপুরে ৩০ হেক্টর, শৈলকুপায় ১৩ ও হরিণাকু-ুতে ৪৮ হেক্টর। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে হরিণাকু-ুুতে। গরম হাওয়ায় ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষকের মুখের হাসি হারিয়ে যেতে বসেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এটা ধানের কোন রোগ না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যায়। তবে ঝড়ের আগে গরম দমকা হওয়ায় পুড়ে যাওয়া ধানের জমিতে এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি মিশিয়ে পটাসিয়াম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামের কৃষক স্কুলশিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে কালবোশেখি ঝড় বয়ে যায়। সাথে প্রচ- ধুলা আর গরম হওয়া বইতে থাকে। বৃষ্টি না হওয়ায় চলছে টানা তাপদাহ। ঝড়ের দু’দিন পর মাঠে গিয়ে দেখা যায় কিছু কিছু জমিতে সবুজের পরিবর্তে ধানের শীষ শাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার ধানের ফলন কম হবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম রবি জানান, চলতি ইরি-বোরো মরসুমে আমার ১৩ বিঘা জমি ধান রয়েছে। গত কয়েকদিনে এমনিতে এ অঞ্চলের প্রচ- তাপদাহ চলছে। এরমধ্যে গত কয়েকদিন আগে কালবোশেখি ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে দুইদিন পর মাঠে গিয়ে দেখি যেসব জমির ধানে দুধভাত ছিলো সে সব ধানের শীষে সাদা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। ফলে ফলনে কিছুটা কম হতে পারে ধারণা এই কৃষকের। মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি ইরি-বরো মরসুমে মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। সম্প্রতি গরম হাওয়া আর কালবোশেখি ঝড়ে প্রতিটি জমির জাগায় জাগায় ধান শাদা বর্ণ হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঝড়ের পরেই এই চিটার পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, এরইমধ্যে আমরা মাঠে গিয়ে ধানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। এ অঞ্চলে টানা তাপদাহের পর গত ৪ এপ্রিল বয়ে যাওয়া কালবোশেখি ঝড়ের আগে গরম দমকা বাতাস বয়ে যায়। অতিমাত্রায় গরম বাতাসের কারণে দুধভাত হওয়া শীষগুলো পুড়ে যায়। এছাড়া ধান গাছে শীষ বের হওয়ার পর দুধভরা অবস্থায় ৩৫ ডিগ্রির ওপরে বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা থাকায় কিছু কিছু ধানের শীষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’