আজ ১৪ রমজান। পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশকের আজ চতুর্থ দিন। রমজান মাস নেকি অর্জনের মাস। এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের ছওয়াবকে কমপক্ষে ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এই কারণে এই মাসে যাকাত দিলে বা দান-খয়রাত করলে অন্য মাসের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছওয়াব পাওয়া যাবে। যাকাত দেয়ার সময় যদিও রমজানের সঙ্গে সম্পর্কিত না, তারপরও অনেকে বাড়তি ছওয়াব হাসিলের জন্য এই মাসে যাকাত দিয়ে থাকেন। যাকাত হলো মালের ওপর গরিবের হক বা অধিকার, এটা কোনো অনুগ্রহ নয় যে দিলাম বা দিলাম না। এই হক মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহই ঠিক করে দিয়েছেন। যাকাতকে আল্লাহতায়ালা বিত্তবানদের ওপর ফরজ করেছেন। কুরআন শরিফে বার বার আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় করো। যাকাত আদায় করলে মাল পবিত্র হয়। আর যাকাত আদায় না করলে সম্পূর্ণ মালের ভেতর নাপাকি লেগে থাকে। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে (সূরা তওবা: ১০৩)। যাকাত দিলে যেমন মালের পবিত্রতা হাসিল হয়, ঠিক তেমনি দ্বীলের পবিত্রতাও হাসিল হয়। তাছাড়া, যাকাত কে ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদ বা ভিত্তির একটি বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। আমরা বিত্তবানরা যদি নিয়মিত যাকাত দিই তাহলে সমাজে কোন অভাবি, গরিব থাকতে পারে না, কেউ না খেয়ে মরতে পারে না। আজ সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেছে। বাংলাদেশের অগণিত মানুষ আজ অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই সংকট মুহূর্তে আমরা এই সমস্ত মানুষের সাহায্যের জন্য যাকাত প্রদান করতে পারি। এমনকি যারা রমজানের পরে যাকাতের হিসাব করি তারা এখন থেকে অগ্রিম যাকাত দিতে পারেন। পরবর্তিতে তাদের নির্ধারিত যাকাত থেকে এই পরিমাণ টাকা বাদ দিবেন। যাকাতের মাধ্যমে সমস্ত দুনিয়ার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এর প্রমাণ হযরত সাহাবায়ে কেরামের যুগ। ইসলামপূর্ব যুগে তদানিন্তন আরব সমাজে ছিলো চরম অভাব-অনটন আর খাদ্যের জন্য হা হা কার। কিন্তু যখন যাকাত ব্যবস্থা চালু হল তখন সমাজ থেকে অভাব এমনভাবে দূর হলো যে আর গরিব লোক পাওয়া যাচ্ছিলো না যাকে যাকাত দেয়া যায়। তবে যাকাত শুধুমাত্র তাদের ওপর ফরজ যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ আছে। যাকাত না দিলে পবিত্র কুরআনে ধমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না তাদেরকে চরম শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তা’ যা’ তোমরা পুঞ্জিভূত করতে (বাকারা:৩৪-৩৫)। তাই আসুন, আমরা এই পবিত্র মাসে এবং করোনা বিধ্বস্ত বর্ষে যাকাত আদায় করি, গরিবের মুখে আহার তুলে দিই এবং বাড়তি ছওয়াব লাভ করি। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)