মেহেরপুর অফিস: করোনাকালে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মেহেরপুরের খামারিরা। এছাড়া লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন পশু পালনকারীরা। ‘গেল বছর করোনায় মাত্র দুটি গরু বিক্রি করেছিলাম। লোকসানের ভয়ে বাকি গরু ফেরত আনা হয়। একবছর ধরে সেই গরুগুলো পালন করছি। এবারও যদি গরু বিক্রি নাহলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে’ এমন মন্তব্য করেন মেহেরপুর গাংনীর সোনার বাংলা ফার্মের মালিক এনারুল হক।
কোরবানির জন্য তার খামারে প্রস্তুত রয়েছে ২৫টি গরু। এ গরুগলো ঢাকাতে না নিতে পারলে পথে বসবেন বলে জানান তিনি। শুধু এনামুল নয়, তার মতো কয়েক হাজার খামারি ও পশু পালনকারী লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন।
মেহেরপুরে বিভিন্ন এলাকার পশু পালনকারী ও খামারিরা জানান, কোরবানির ঈদের হাট পশু পালনকারীদের জন্য একটি বড় বাজার। সবাই এ সময় পশু বিক্রির জন্য আগে থেকেই বাছুর কিনে লালনপালন শুরু করেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অনেক গবাদি পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এ বছর লকডাউনের ফলে স্থানীয় পশুহাটগুলো বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
মেহেরপুরের বাড়িবাকা গ্রামের তুহিন মাসুদ জানান, তার খামারে রয়েছে ১৫টি হরিয়ান ও নেপালি জাতের গরু। প্রতিটি গরুর দাম পাঁচ-সাত লাখ টাকা। গেল বছর স্থানীয় ব্যাপারীরা খামারে এসে গরু কিনেছিল। এবার পশুর হাট বন্ধ হওয়ায় কেউ আসছেন না। এ গরুগুলো ঢাকাতে নিয়ে যেতে না পারলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
বামুন্দির বালিয়াঘাট গ্রামের জেএ এগ্রো ফার্মের মালিক সাইদুর রহমান জানান, তিনি কোরবানির ঈদের জন্য খামারে ১৮টি গরু পালন করেছেন। দুদিন আগে বিক্রি হয়েছে তিনটি গুরু। বিক্রি করা একেকটি গরুর ওজন ১২-১৩ মণ, দাম পেয়েছেন ২ লাখ ৮০ হাজার। তবে পরিস্থিতি সাভাবিক থাকলে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। তার খামারে আরও আটটি বড় গরু রয়েছে, যেগুলোর ওজন ১৮-২০ মণ। এগুলো তিনি ঢাকায় নিয়ে যাবেন।
মেহেরপুর জেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, ‘এক বছর লালনপালনের পর খামারিরা আশায় রয়েছেন ভালো দামে কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করবেন। তবে বাজার পরিস্থিতি ভালো নাহলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। বাইরের ব্যাপারীদের সঙ্গে অনেকেরই কথা হয়েছে। পরিবেশ না বদলালে তারা জেলায় পশু কিনতে আসবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি কী হবে?- তাও বলা যাচ্ছে না। ঈদের এখনো বেশ কিছুদিন বাকি। সবাই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।’
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৩০ হাজার খামারি কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৯টি গবাদি পশু। এরমধ্যে গরু ৫৭ হাজার ২৮৭টি, ছাগল ১ লাখ ২২ হাজার ৯৯৪টি, ভেড়া ২ হাজার ৭১২টি ও মহিষ রয়েছে ৫৭৬টি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় খামারিরা গবাদিপশু পালনে সফল হয়েছেন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পশু বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করতে পারবেন তারা। গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনেককেই লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ বছর এলাকাতে গরু-মহিষের দাম ভালো। আশা করি খামারিরা লাভবান হবেন।’
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মুনুুর আলম খান বলেন, ‘দেশে এখন কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কোরবানির হাটে খামারিরা তাদের গবাদিপশু বিক্রি করবেন। মেহেরপুর জেলায় গত বছর আমরা একটি অনলাইন পশুহাট চালু করেছিলাম। এ বছরও সেটি চালু রয়েছে। অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনা করছেন। তবে পশুর হাটের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা এখনও পাইনি।’