ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এক জনপ্রতিনিধির বাড়ির ছাদের ওপর থেকে পুলিশের পিস্তল উদ্ধার নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুরো উপজেলাময় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ঘটনাটি এ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি দিয়েছে। এ অবস্থায় গত সোমবার কোটচাঁদপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলমকে ঝিনাইদহ পুলিশ কট্রোল রুমে বদলি করা হয়েছে।
কোটচাঁদপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলম থানায় দায়িত্বে থাকাকালীন বলেছিলেন, শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালান উপজেলার বলুহর ইউনিয়নের বিদ্যাধরপুর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলামের বাড়িতে। প্রতিটা ঘর তল্লাশির পর ছাদে পাটখড়ির গাদার ওপর খবরের কাগজ ও পলিথিন দিয়ে জড়ানো অবস্থায় একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। নজরুল ইসলাম মেম্বার এক সপ্তাহ আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানায় ফিরে আসেন। পরে বিষয়টি নিয়ে অজ্ঞাত আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি চাউর হওয়ার পর উপজেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। নজরুল ইসলাম মেম্বারসহ প্রতিবেশীরা অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের বিষয়টি তুলে ধরেন। নজরুল ইসলাম মেম্বার বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ এসে ঘর তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে আমাকে নিয়ে ছাদে যায়। পুলিশ ছাদে গিয়ে পাটখড়ির ওপর খোলা জায়গায় রাখা পিস্তলটি পেয়েছে এটা সত্য। তবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ এখানে অস্ত্র রেখে যেতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, ওসি সাহেব কয়েক জায়গায় ফোন করে আমাকে রেখে চলে যান। পুলিশ চলে যাওয়ার পর অস্ত্র এখানে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের পেছনে পচা-কাদাপানি মাড়িয়ে কেউ এসে মেহেগনি গাছ বেয়ে ছাদে উঠেছিলো। যা দেখলে সহজেই বোঝা যায়। তার প্রমাণ, গাছে ওঠার সময় গাছে কাদার চিহ্ন রয়ে গেছে। তিনি বলেন, পেছনের জানালা বন্ধ থাকায় পিস্তল ঘরে রাখতে পারেনি বোধহয়। তিনি অস্ত্রের প্রকৃত মালিক খোঁজার জন্য নিজেই পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে জানাবেন বলে জানান।
পাশেই ২০ মিটার দূরে আধাপাকা বাড়িতে থাকেন নজরুল ইসলামের মা আনোয়ারা খাতুন। তিনি বলেন, রাতে এক পুলিশ পায়ে ও প্যান্টে কাদা নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমাকে টিউবওয়েল দেখিয়ে দিতে বলেন। সেখান থেকে হাত-পা-প্যান্ট পানিতে পরিষ্কার করে চলে যান। তারপরেই দেখি ছেলের বাড়িতে পুলিশ। তিনি বলেন, এখন বুঝতে পারছি ওই পুলিশই বাড়ির পেছন দিয়ে পিস্তল রাখতে গিয়ে অন্ধকারে কাদার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। গাছে, সানশেডে ও ছাদে থাকা কাদা তার প্রমাণ।
প্রতিবেশী আত্তাপ উদ্দীনের ছেলে আকিমুল ইসলাম, জাকির হোসেনের ছেলে নূর হোসেন ও হাসেম আলীর স্ত্রী আনজুরা খাতুন অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, আমাদেরকে অভিযানের সময় মেম্বারের বাড়িতে পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। পরে আমরা পিস্তল ছাদে পাওয়ার কথা শুনতে পাই। ছাদে খোলা জায়গায় পিস্তল কীভাবে এলো বিষয়টি খোঁজ করতে আমরা অনেকেই বাড়ির পেছনে গেলে কাদার মধ্যে পা দেবে যাওয়া জুতার ছাপ দেখতে পাই। সেই সাথে কাদাসহ গাছে ওঠার কারণে গাছে ও ঘরের সানশেডের ওপরে কাদা দেখতে পাই। তারা বলেন, এতেই পরিষ্কার যে কেউ নজরুল মেম্বারকে ফাঁসানোর জন্য এ অস্ত্র ছাদে রেখে গেছেন।
তাদের দাবি, পুলিশ যাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে এসেছেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিতর্কিত অস্ত্র উদ্ধারের সোর্সকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে থানা অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলম বলেছিলেন, এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী সেকেন্ড অফিসার এসআই সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস বলেন, অভিযোগ যায় আসুক না কেন মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।