দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তাদের কার্যক্রম বেশ জোরেসোরে চালাচ্ছে। আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে সব ধরণের প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এবারের নির্বাচনে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ১৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০ প্রার্থী। এদের মধ্যে মূলত দুটি পদের বিপরীতে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও এখনো পর্যন্ত হয়নি কোনো প্যানেলভুক্ত। যে কারণে আখেরি মিছিল করতে পারে ৪টি সংগঠনের পক্ষ থেকেই। মাত্র ১ হাজার ৮৮ জন ভোটার হলেও বরাবরের মতো এবারও ৪টি মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারে। মিছিলের বহর যতো বড়ই হোক কোনো প্রার্থীর ভোটার কতজন তা পরিস্কার বুঝা যাবে ৮ মার্চের রাত ৮টার মধ্যেই। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আচরণবিধি প্রকাশ করা হলেও তা মানতে দেখা যাচ্ছে না কোনো কোনো প্রার্থী ও সমর্থকদের। ফলে বুধবার সকালে প্রার্থীদের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আচরণবিধি মেনে শৃঙ্খলার সাথে প্রচারণার তাগিদ দেয়া হয় নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে। তা মেনে নিয়েছেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে কেরুজ এলাকাকে ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে মুড়ানো হয়নি। সংগঠনগুলো করা হয়নি আলোক সজ্জায় সজ্জিত। তাই বলে থেমে নেই সভা-সমাবেশ ও খন্ড খন্ড মোটর সাইকেল শো-ডাউনের মহড়া। থেমে নেই প্রার্থীরা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি ভোটারদের দুয়ারে ছুটতেও কমতি নেই কোনোপ্রার্থীর। দলে ভেড়াতে প্রতিশ্রুতির খই সেই আগের মতো ফুটছে। পুরানো অভ্যাসটাও কাজে লাগাতে ভুলেননি প্রার্থীরা। যে ভোটারের দুয়ারে যাচ্ছেন নির্বাচিত হওয়ার পর তাকেই সকল সুযোগ-সুবিধা তালিকায় প্রথম নাম অর্ন্তভুক্তও করছেন তাকেই। আসলে কার নাম প্রথম, আর কার নামই বা শেষে তাতো জানেন শুধু প্রতিশ্রুতিই দাতাই। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন মানেই অর্থের খেলা। এ খেলায় যে এগিয়ে থাকবে জয়ের সম্ভাবনা তারই বেশী। জনপ্রিয়তা যতই থাকুক না কেনো টাকার কাছেই হার মানতে হয় যোগ্য কোনো কোনো প্রার্থীকে। ভোটের বাকী আর মাত্র ৩ দিন। শুরু হয়ে গেছে টাকা ছিটানোর পালা। এরই মধ্যে কেরুজ নির্বাচনে প্রার্থীদের অর্থ জোগানদাতারা ভিড়তে শুরু করেছেন কেরুজ এলাকায়। অর্থ জোগানদাতাদের তালিকায় মূলত মিলের মদ বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টরা। যে যে প্রার্থী এজেন্টদের আর্শিবাদপুষ্ট হবেন, সে সে প্রার্থীর বৈতরী পার হওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশী। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীরা ততই বদলাচ্ছেন কৌশল। নিত্যদিন নয়া কৌশল নিয়ে মাঠ চষতে হচ্ছে প্রার্থীদের। কেরুজ নির্বাচনে শেষ বলতে কিছু নেই। শুধু ভোটের আগের রাতেই নয়, ভোট শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মাথায় যেমন সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে, তেমনই ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের পর শেষ মুহূর্তেও চোখের ইশারায় বদলে যেতে পারে চিত্র। এরই মধ্যে মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাতের আধারে যেমন করা হচ্ছে শপথ, তেমনই ধর্মীয়গ্রন্থ ছুঁয়েও ভোটারদের ওয়াদা করানো হচ্ছে। তবে তা নেহাতই বিনে পয়সায় নয়। মোটা অংকের টাকাতেই এ শপথ ও ওয়াদার পালা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। কোন কোন সুবিধালোভী ভোটার একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকেও সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এ নির্বাচনের বাতাস শুধু দর্শনা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলার অনাচে-কানাচে। প্রার্থীদের দৌঁড়-ঝাপ, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়ে তোলে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের অনেক আগে-ভাগেই প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকদের দলবদ্ধ মহড়াই শহরবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কেরুজ নির্বাচনের কথা। সাধারণ সভার পর থেকেতো যেনো কোমর বেধে মাঠে নামে সকলে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে প্রায় সবকটি সংগঠনের পক্ষে মিছিলের মহড়ার হিড়িক পড়ে যায়। দর্শনা যেনো পরিণত হয় মিছিলের শহরে। প্রতিদিন প্রায় সবকটি সংগঠনের কর্মীসভা ও মধাহ্ন্যভোজ চলছে। তবে নির্বাচনে খরচের নেপথ্যে থাকেন মদ বিক্রয় কেন্দ্রগুলোর এজেন্টরা। প্রত্যেক সংগঠনের র্যালি ও কর্মীসভায় উপস্থিতির সংখ্যা দেখে বোঝা মুশকিল কে প্রকৃত ভোটার আর কে বা ভাড়াটে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮ জন হলেও একেক সংগঠনে কর্মী উপস্থিতি ও মিছিলের জনবল যেনো হাজার পেরিয়ে যায়। নিজের অবস্থান মজবুত বোঝাতেই এ কৌশল অবলম্বন করে থাকেন শ্রমিক নেতারা। সংগঠন কার্যালয় ও মিছিল-মিটিংয়ে ভোটারদের পাশাপাশি বহিরাগতদের অংশগ্রহণ লক্ষনীয়। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি তৈয়ব আলী (চাঁদতারা) ও ফিরোজ আহমেদ সবুজ (হারিকেন), সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান (বাইসাইকেল) ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (ছাতা), সহ-সভাপতি পদে বর্তমান সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (চেয়ার) সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ (মোরগ), এএসএম কবির (হাতপাখা) ও আবু সাঈদ হোসেন (মাছ), সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন (কাপ-পিরিচ), ইসমাইল হোসেন (তালাচাবী), একরামুল হক খলিল (ফুটবল) ও আকরাম আলী (কলস) প্রতীক পেয়েছেন। তাছাড়া ৭টি ওয়ার্ডের ৯ সদস্য পদের বিপরীতে ১৮ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ১নং ওয়ার্ডে প্রশাসন, সংস্থাপন, ভূমি, বাণিজ্যিক শাখা, প্রধান স্টোর, মসজিদ, ওয়েব্রিজ, ইমারত, গোপন শাখা, চোলাই বিক্রয় শাখা, স্বাস্থ্যবিধান, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, জেনারেল, টুলস স্টোর, হিসাব বিভাগের সকল শাখা, কৃষি খামার অফিস, কারখানা করণীক ও ওষুধ কারখানায় ভোটার সংখ্যা ১০১ জন। সদস্য পদে সেলিম খান (বালতি) ও সালাউদ্দিন শাহ সনেট (ডাব), ২নং ওয়ার্ডে চোলাই কারখানার সকল শাখা, সকল পণ্যাগার, ডিস্টিলারি (ভান্ডার), ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিক্রয় অফিসে ভোটার সংখ্যা ১৪৬ জন। সদস্য প্রার্থী বাবর আলী (বেলচা) ও আমিনুল ইসলাম (ডাব), ৩নং ওয়ার্ডে পরিবহন বিভাগ, কৃষি খামার পরিবহন চালক- হেলপার ও মেইন্টটেন্স শাখায় ভোটার সংখ্যা ১৭২ জন। সদস্য পদে শরিকুল ইসলাম (টর্চলাইট) ও শফিকুল ইসলাম (ডাব)। ৪ নং ওয়ার্ডে ইক্ষু সংগ্রহ অফিস, পিসি, সেন্টার গার্ড কাম স্কেলম্যান, পিডি, কেন আউট স্টেশন গার্ড, এলডিএ, কেন ক্যারিয়ার সুপার ভাইজারে ভোটার সংখ্যা ১২৪ জন। সদস্য পদে ইয়ামিন হক (আখের আঁটি) ও মতিয়ার রহমান (ডাব), ৫নং ওয়ার্ডে সকল সিডিএ, সিডিএ কাম সিআইসি, আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক খামার, সকল কৃষি খামারের করণীক, ফিল্টম্যান, সুপার ভাইজার, পাম্পচালক, পূর্জি রাইটার ও ক্রয় করনীকে ভোটার সংখ্যা ১০৫ জন। সদস্য পদে সাইফুদ্দীন (ডাব), হারিজুল ইসলাম (আখের আঁটি)। ৬নং ওয়ার্ডে উৎপাদন বিভাগ, সুগার ল্যাবটারি, টাটা এন্ট্রি বিদ্যুৎ বিভাগে ভোটার ২৩০ জন। ২টি সদস্য পদে হাফিজুর রহমান (বেলচা), মজিবর রহমান (ডাব), নুরুল ইসলাম (আখেরআটি) ও মোহন আলী (হাতুড়ি)। ৭নং ওয়ার্ডে প্রকৌশল, মিল হাউজ, বয়লিং হাউজ, বয়লার, টার্বাইন ও ওয়ার্কসপ শাখায় ভোটার সংখ্যা ২১০ জন। দুটি সদস্য পদে আজাদ আলী (হাঁতুড়ী), জহিরুল ইসলাম (আখের আটি), মফিজুর রহমান (বেলচা) ও ইদ্রিস আলী (কাঁঠাল) প্রতীকে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এবারের ভোটে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেরুজ চিনিকলের মহা-ব্যবস্থাপক (অর্থ) রাব্বিক হাসান, সদস্য সচিব, মিলের মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদা হাসান বাদশা, সদস্য উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সোনাল) আবদুল ফাত্তাহ, উপ-ব্যবস্থাপক (পরিঃ প্রকৌশলী) আবু সাঈদ ও জুনিয়র অফিসার (ভূমি) জহির উদ্দিন।