গাংনী প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া শহরের কাজী নজরুল ইসলাম লেন (কোর্টপাড়া) এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে তারিন সুলতানা জুথি (২৭) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করায় আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে প্রতীয়মান হলেও তারিনের শরীরে রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন। তারিনের স্বামীর নাম নবীন হোসেন। তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তারিন হচ্ছে নবীনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তারিন সুলতানা জুথি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে। চারুকলা ও সাহিত্যে তার বেশ দখল ছিলো। আবৃত্তিতে দখল থাকায় শিল্পকলা একাডেমীতেও ছিল তার পদচারণা। মেহেরপুর জেলায় তার পরিচিতি ছিল চারু হিসেবে।
তারিনের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে নবীন হোসেনের সাথে তারিনের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝে মধ্যেই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তাদের এক বছরের দাম্পত্য জীবনে ১ বছর বয়সী একটি কন্যা শিশু রয়েছে। নবীন ২য় স্ত্রী তারিন সুলতানা জুথিকে বিয়ের পর থেকেই শহরের কোর্টপাড়া এলাকার ওই ভাড়া বাসাথে বসবাস করতো। তবে তারিন একজন ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মনির্ভরশীল মানুষ। পড়াশুনার পাশাপাশি চিত্রাংকনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার পারদর্শীতা ছিলো বলে স্থানীয়রা জানায়।
জানা গেছে, তারিনের মরদেহ উদ্ধারের ৩-৪ ঘণ্টা আগে তারিন সুলতানা নামীয় তার নিজের ফেসবুক আইডিতে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি পোস্ট দেন। প্রথম পোস্টের স্ট্যাটাস ছিল ‘আমাকে মাফ করে দিস মা’। এই পোস্টে তারিনের কন্যা শিশুর সাথে বিশেষ আনন্দের মুর্হূত ও পেছনে মায়ের সাথে তার একটি ছবি ছিলো। এর কিছুক্ষণ পরে আরও একটি পোস্ট রয়েছে। যার স্ট্যাটাস ছিল ‘আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত মা আমি আর কখনোই ভুল করবোনা মা আমাকে ক্ষমা করে দিও’। এই পোস্টে মায়ের কাধে হাত রাখা একটি ছবি দেয়া হয়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পরে তারিনের ফেসবুকে আরও একটি স্ট্যাটাস রয়েছে। মৃত্যুর আগে সর্বশেষ এই পোস্ট ছিল ‘আমার শেষ ইচ্ছা আমার মৃত্যুর পরে আমার মুখ আমার মা বাবা এবং আমার হাসবেন্ডকে না দেখানো হোক এবং আমার লাশ আমার মা-বাবার বাড়িতে না নিয়ে আমার দাদী বাড়ি নিয়ে আমার শেষ কাজটুকু করে আমার দাদীর কাছে আমার কবর দেয়া হোক’।
আরও জানা গেছে, পরিবারের অমতে বিয়ে আর দাম্পত্য জীবনের কলহ আর স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তারিন এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে তারিনের মতো একজন শিল্পমনা, উদ্যোমী ও আত্মচেতা মানুষের কাছ থেকে আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য কাজ মোটেও আশা ছিলো না বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে।
তারিনের চাচা মাহবুবুর রহমান তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘হত্যার বিচার চাই: তারিন সুলতানা জুথিকে তার স্বামী নবীন আজ সকালে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে। জুথি তার স্বামীর সাথে কুষ্টিয়া কোর্টপাড়া কুষ্টিয়াতে বাস করতো। এর আগে অনেকবার তার ওপর তার স্বামী নবীন পাশবিক অত্যাচার করেছে’। ‘আমি নিশ্চিত ময়না তদন্তে জুথির (তারিন) ওপর অত্যাচারের নিশানা পাওয়া যাবে’। আমি ও আমাদের পরিবার এই হত্যার বিচার চাই’।
এ বিষয়ে তারিনের স্বামী নবীনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, বুধবার সকালে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে আমার ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা রোডে সিলিন্ডার আনতে যায়। এসময় তারিনের ছোট চাচা আমাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন। আমি পরে বাসায় ফিরে দেখি পুলিশ লাশ উদ্ধার করছে। হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে আত্মহত্যা করতে হবে। আমিও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের দু’জনের মধ্যে এমন কোনো দাম্পত্য কলহের ঘটনাও ঘটেনি। তারিনের পরিবারের দাবিকে আমি ভিত্তিহীন মনে করি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, ‘বুধবার বিকেলে সংবাদ পেয়ে শহরের কোর্টপাড়া এলাকা থেকে তারিন নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। তবে প্রাথমিকভাবে পারিপার্শ্বিকতায় ধারণা করা হচ্ছে এটি প্ররোচিত আত্মহত্যা হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং পুলিশের তদন্তে তারিনের মৃত্যুরহস্য উন্মোচন হবে বলে জানান তিনি।