রহমান মুকুলঃ করোনার ২য় ঢেউ-এ ৬ জন ভিআইপিসহ আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২০ জন আক্তান্ত হয়েছেন। ভি আইপিদের ৬ জনের মধ্যে ৪ জন এখনও চিকিৎসাধীন। স্থানীয় ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন চিকিতসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকী ৪ জন এখনও চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, করোনা সংক্রমনের ২য় ঢেউ-এ আলমডাঙ্গায় স্থানীয়ভাবে ১৪ জন ব্যক্তি করোনা পজিটিভ ছিলেন। এদের মধ্যে ১০ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। তারা গত ১৪ এপ্রিল ছাড়পত্র নিয়েছেন। বাকী ৪ জন এখনও চিকিৎসাধীন। এরা হলেন আলমডাঙ্গা জেহালার ফিরোজা বেগম, আসমানখালীর মুন্সী আবু তালেব, আলমডাঙ্গা মাদ্রাসাপাড়ার শফিকুল ইসলাম ও মাজহাদের সুশান্ত কুমার।
অন্যদিকে, ঢাকায় বসবাসকারী আলমডাঙ্গার ৬ জন ভিআইপি করোনা ভাইরাসের ২য় ঢেউ-এ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে করোনামুক্ত হয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণের পরও তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা টিকার ১ম ডোজ গ্রহণ করেন। এর ঠিক ২৭ দিন পর ৬ মার্চ তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বেশ কিছু দিন পূর্বেই তিনি সুস্থ্ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
তাছাড়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সামসুল আবেদীন খোকন। গত ২২ মার্চ করোনা পরীক্ষায় তিনি পজিটিভ হন। শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় গত ২৮ মার্চ তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ১ মাস হাসপাতালে চিকিসাধীন ছিলেন। করোনা মুক্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল তিনি বাড়ি ফেরেন।
ঢাকায় বসবাসকারী আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার সন্তান ডিউক হুদা প্রভাতি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর। তিনি সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হলে জ্বর ভালো হচ্ছিল না। শেষে গত ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হন। বর্তমানে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে অক্সিজেন দেওয়া লাগছে। ডিউক হুদা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পেশাজীবি দলের আহ্বায়ক। তিনি ৯০-র স্বৈরাচার সরকার হটাও আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। অভি-নিরু-কাশেম-ডিউক ছিলেন তৎকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিবার্য নেতৃত্বের নাম।
ডিউক হুদার সৎ, স্পষ্টবাদী ও পরোপকারী হিসেবে এলাকায় খ্যাতি রয়েছে। গত বছর করোনার দুঃসময়ে তিনি হাটবোয়ালিয়া বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দরিদ্রদের কয়েক দফা খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছিলেন। করোনাকালীন নিজের মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ভাড়া মওকুফ করেছিলেন। তাছাড়া, মানবিক স্পর্শ নামে তার নিজের একটি সেবামূলক সংগঠণ রয়েছে। তার দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া চাওয়া হয়েছে।
সুইট অ্যাগ্রোভেটের সত্ত্বাধিকারী ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বতুল হুদা সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনিও আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার সন্তান। বতুল হুদা ও তার স্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব সুরাইয়া পারভীন শেলী গত ১৭ মার্চ করোনা পজিটিভ হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে সিএমএইচএ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনামুক্ত হয়ে বর্তমানে ঢাকা মোহাম্মদপুরের বাড়িতে আছেন। তারা এখনও যতেষ্ঠ দুর্বল।
এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় গল্পকার ও উপন্যাসিক দীপু মাহমুদ করোনায় আক্রান্ত। তিনি গত গত ১৪ এপ্রিল পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয়েছেন। বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে চিকিতসাধীন রয়েছেন। তিনিও আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার সন্তান, ডিউক হুদার ভাতিজা।
দীপু মাহমুদ বর্তমান সময়ের সবচে’ আলোচিত লেখক। সমসাময়িক সাহিত্যের প্রায় সবগুলো পুরস্কার তিনি একাই অর্জন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থিদের জন্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে লেখা “বৈচিত্রময় মানুষ” নামক সম্পূরক পাঠ্য বইতে সংকলিত হয়েছে তাঁর লেখা “ আলোময় দিন” গল্প। ইতোমধ্যেই তিনি দেশ পান্ডুলিপি পুরস্কার-২০১৮,আবু হাসান শাহীন স্মৃতি পুরস্কার, ‘অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার,নবাব সিরাজউদদৌলা স্বর্ণপদক’১৭ ,এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক, সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদক, সুনীতি অ্যাওয়ার্ড ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ সম্মাননাসহ পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ বলেন, করোনামুক্ত থাকতে হলে আমাদের ৩টি বিষয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত – মাস্ক পরিধান করতে হবে। দ্বিতীয়ত – শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। তৃতীয়ত – হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
এ সব আমাদের মজ্জ্বাগত অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যে সব খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেগুলি বেশি খেতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সচেতনতার সাথে।