ঐতিহাসিক মুজিবনগরের ডিজিটাল বাগোয়ান ইউপি গড়তে কে পাচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন

মহাসিন আলী/শেখ শফি: ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়। এর প্রায় ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আবারও কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বৈদ্যনাথতলার বিশাল আম্রকাননে স্বগর্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও ভারত সরকারের সহযোগিতায় ওই আ¤্রকাননে গঠন করা হয় মুজিবনগর সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহণের পর এক বীরত্বপূর্ণ মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর হাজার হাজারো মা-বোনের ইজ্জত এবং কোটি জনতার আত্মত্যাগের সুমহান ঐতিহ্য সৃষ্টি করে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করেন। এরপর স্বাক্ষী হিসেবে বৈদ্যনাথতলার নাম করণ করা হয় মুজিবনগর এবং স্বাধীন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। পর্যায়ক্রমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময়ে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে মুজিবনগরে বিশাল আম্রকানন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন মূরাল, সরকারি শিশু পরিবার, ছয়স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, শাপলা চত্ত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা সমৃদ্ধ কমপ্লেক্সে। বাগোয়ান ইউনিয়নের মুজিবনগর কমপ্লেক্সের সংলগ্ন স্থানে হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সড়ক, সম্পন্ন হতে চলেছে স্থলবন্দর। এখানে বিশ^মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যার কাজ অতি সত্বর শুরু হবে। বর্তমানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সের নাম বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বিশেষভাবে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে সারাবছর মুজিবনগরে লোক সমাগম হয়ে থাকে। অনেকে দেখতে আসেন; অনেকে জানতে আসেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
মুজিবনগর কোন শহর নয়; নয় কোন গ্রাম। এটি ছিল সহ¯্রাধিক আম গাছের সমন্বয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের এক টুকরো ভূখন্ড নিয়ে একটি আ¤্রকানন। বর্তমান সরকার মেহেরপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন হতে ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে মুজিবনগর উপজেলা গঠন করে। ১১টি গ্রাম নিয়ে গঠিত বাগোয়ান ইউনিয়ন বর্তমানে মুজিবনগর উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন। মুজিবনগর ভিত্তিক কোন পৌরসভা কিংবা শহর গড়ে না ওঠায় উপজেলার শহর ও বিভিন্ন অফিস আদালত বাগোয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে স্থাপিত। তাই এলাকাবাসীর সাথে সাথে বর্তমান সরকারও চান এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোক আওয়ামী লীগ মনোনীত কোনো প্রার্থী।
আগামী ১১ নভেম্বর/২০২১ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার সাথে সাথে মুজিবনগর উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে চলছে নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ। কোন দল থেকে কে কে চাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন আর কে পাচ্ছেন মনোনয়ন? মুজিবনগর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন বাগোয়ানের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কে কে হচ্ছেন?
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণায় আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ৯ প্রার্থী। এরা হলেন পরপর ২ বার বাগোয়ান ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন। আনন্দবাস গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস আয়ূব হোসেন বর্তমানে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ-ভারত যুব মৈত্রী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক এবং মুজিবনগর উপজেলা বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। এছাড়াও তিনি মুজিবনগর থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস, সাবেক বৃহত্তর মেহেরপুর সদর থানার সাধারণ সম্পাদক ও মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তার প্রত্যশা তিনি পুনঃনির্বাচিত হলে ঐতিহাসিক মুজিবনগরকে পূর্ণাঙ্গ প্রথম রাজধানীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং মুজিবনগর তথা বাগোয়ান ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করার। এছাড়া বাগোয়ানকে সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা।
অন্যান্যের মধ্যে মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাগোয়ান ইউপি’র সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস মো. সোনাল উদ্দীন (৪১) আনন্দবাস গ্রামেরই সন্তান। তিনি বর্তমানে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্য ও মেহেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য। ২০০২ সালে জামাত-বিএপির মিথ্যা মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। তার প্রত্যাশা তিনি নির্বাচিত হলে ঐতিহাসিক মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদকে আগামী দিনের সুখী ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা।
মুজিবনগর উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি আনন্দবাস গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তার প্রত্যশা তিনি নির্বাচিত হলে মাদক নিয়ন্ত্রিত ও দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল বাগোয়ান ইউনিয়ন গঠন করবেন।
বাগোয়ান ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের মো. আজাত শেখের ছেলে মাস্টার্স (অনার্স-রাস্ট্র বিজ্ঞান) পাস উচ্চ শিক্ষিত হাসানুজ্জামান লাল্টু। তিনি মুজিবনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য। বর্তমানে আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী। মুজিবনগর অন্যন্য পার্কের মালিক। তিনি বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি নির্বাচিত হলে তার প্রত্যশা মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউনিয়ন হবে একটি রোল মডেল ইউনিয়ন। বেকার যুবকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান করা।
আনন্দবাস গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস শাহীন উদ্দীন শাহীন বর্তমানে মেহেরপুর জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য। তিনি বাংলাদেশ জেলা পরিষদ মেম্বারর্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ তাঁতীলীগ বাগোয়ান ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক। তার প্রত্যাশা নির্বাচিত হলে তিনি বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে আরো গতিশীল ও বেগবান করে গ্রামকে শহরে পরিণত এবং সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা।
আনন্দবাস গ্রামের জামাত আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫০) নবম শ্রেণি পাস। তিনি বর্তমানে মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক। উপজেলা যুবলীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি। তার প্রত্যাশা নির্বাচিত হলে দরিদ্রতা দূরীকরণ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা।
নাজিরাকোনা গ্রামের মৃত আহসান আলী খাঁনের ছেলে শায়েস্তা খাঁন। তিনি বর্তমানে বাগোয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। তার শিক্ষাগত যোগ্যাতা এইচএসসি। তার প্রত্যশা তিনি নির্বাচিত হলে ঐতিহাসিক মুজিবনগরের কেন্দ্রস্থল বাগোয়ান হবে সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি মডেল ইউনিয়ন।
মানিকনগর গ্রামের মৃত সামছদ্দীন মল্লিকের ছেলে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস কুতুবউদ্দীন। তিনি বর্তমানে কেদারগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বাগোয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার প্রত্যশা তিনি নির্বাচিত হলে মুজিবনগরের কেন্দ্রস্থল বাগোয়ান ইউনিয়ন হবে ডিজিটাল ইউনিয়ন।
বাগোয়ান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাগোয়ান গ্রামের আবুল খয়েরের ছেলে আজিজুর রহমান মুংলা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তার প্রত্যাশা নির্বাচিত হলে বাগোয়ান হবে সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি মডেল ইউনিয়ন।
মানিকনগর, নাজিরাকোনা, ভবরপাড়া, সোনাপুর, আনন্দবাস, তারানগর, জয়পুর, বাগোয়ান, বল্লভপুর, রতনপুর ও ঢোলমারী এ ১১টি গ্রাম নিয়ে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন বাগোয়ান। এ ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৪ টি (২০১৬ এর নির্বাচনে)। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আয়ূব হোসেন ১১ হাজার ৩৬৮ ভোট আর ধানের শীষের প্রার্থী মানজারুল ইসলাম ৮ হাজার ৬৩৫ ভোট পান। এবারের নির্বাচনে এ ইউনিয়ন থেকে উপরে উল্লিখিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী ৬ অক্টোবর/২১ তারিখের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আবেদন করবেন। আগামী ১২-১৩ অক্টোবরের মধ্যে আওয়মী লীগ তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেন বলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে জানিয়েছেন।

Comments (0)
Add Comment