একজন মনিরুজ্জামান এবং তার রাজনীতি

মাজেদুল হক মানিক: তার নাম মনিরুজ্জামান। গাংনী উপজেলার হিজলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। রাজনীতিতে আছেন বহু বছর ধরে। গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বড়রা তাকে মনিরুজ্জামান মাস্টার বলেই ডাকেন। পারিবারিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই মানুষটি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। রাজনীতিতে সত্যিকারের অর্থে ক্লিন ইমেজের মানুষ বলতে যাদেরকে বোঝায় তার মধ্যে মনিরুজ্জামান অন্যতম একজন মানুষ। সারাজীবন ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলেও দুর্নীতি কিংবা অপকর্ম যাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যার হাতে তাই নিরাপদ আছে ক্ষমতার নেতৃত্ব। ছোটবেলা থেকেই সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী মানুষটি সংগঠনের জন্যই নিবেদিত।
গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের মাইলমারী গ্রামের মৃত মিশকাত উল্লাহর ছেলে মনিরুজ্জামান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সংগ্রাম কমিটি গঠন হয়েছিলো মিশকাত উল্লাহ ছিলেন সেই কমিটির কাথুলি ইউনিয়ন সভাপতি। এছাড়াও তিনি ১৯৭২ সালে ওই ইউনিয়নের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে মানুষের পাশে থাকা ছাড়াও শিক্ষা প্রসারে তার ভূমিকা ছিলো অনন্য। মাইলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন কাথুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়াও জনপ্রিয় মানুষ হিসেবে একই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
পিতার হাত ধরেই মূলত রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মনিরুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে আসেন। শিক্ষানুরাগী হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় হন। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে বর্তমানে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুধু মনিরুজ্জানই নয় তার পুরো পরিবার রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। রক্তে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি। তার ছেলে মুনতাছির জামান মৃদুল মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মনিরুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যরা। ১৯৮৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনী মেজর হুদা ও ফ্রিডম পার্টির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। এরপরে ১৯৯০ সালে জামায়াত বিরোধী আন্দোলনে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যা গাংনীর রাজনৈতিক ইতিহাসে আজও স্মরণীয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ পরিবারে যে নির্যাতন শুরু হয় তার প্রচ- শিকার হন মনিরুজ্জামান ও তার পরিবার। জুলুম, নির্যাতন, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাটের শিকার হন তারা। এছাড়াও মিথ্যা মামলার আসামি হন তারা।
শত নির্যাতন আর জুলুমের স্টিম রোলারের মাঝেও দল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অটুটু অবিচল মনিরুজ্জামান। দুঃসময়ের মধ্যেও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিতে এ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে সফর অব্যাহত রাখেন। সাংগঠনিকভাবে যোগ্যতার পরিচয় দেয়ার মধ্য দিয়ে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগকে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বহু নেতা দলের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলেও কেবল মনিরুজ্জামান ব্যতিক্রমী। দল যখন যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে ঝাঁপিড়ে পড়েছেন তিনি। প্রচ- দলভক্ত আর দলের শৃংখলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষটি তাই দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয় পাত্র হিসেবে বিবেচিত।
মনিরুজ্জামান সদালাপি ও মিসুক মানুষ। সবার সাথেই তিনি হেসে কথা বলেন। শোনের নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা। সমাধান করেন সাধ্যমতো। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার এতো দিনেও তিনি অবিচল রয়েছেন সততা, ন্যায় পরায়ণতায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার এই মানুষটিকে আঁচ করেনি ক্ষমতার কালো ছায়া। ফলে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

 

Comments (0)
Add Comment