দর্শনা অফিস: আগামী ফেব্রুয়ারিতে দর্শনা পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। দেশে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলমান থাকায় মেয়াদ শেষের আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দর্শনা পৌরসভা নির্বাচন। ফলে এ মাসেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে ডিসেম্বর মাসে। এদিকে তফসিল ঘোষণা না হলেও দর্শনায় আ.লীগ ও বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী এক ডজন মেয়র প্রার্থী ভোটের মাঠ চষছেন। শীতের শুরুতে নির্বাচনী গরম হাওয়া বইতে শুরু করেছে দর্শনায়। প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শো-ডাউন, গণসংযোগ, দোয়া ও ভোট প্রার্থনা পালা রয়েছে অব্যাহত। এ ছাড়া কোন কোন প্রার্থী ছবি সংবলিত পোস্টার, বিলবোর্ড ও ব্যানার ঝুলিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে। ১২ জন প্রার্থীই দলের আশীর্বাদের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। দল থেকে প্রার্থিতা ঘোষণার পর দেখা যাবে বাকিদের মধ্যে কে কে টিকে থাকবেন ভোটের মাঠে। দলের সমর্থনের আশায় নীতি নির্ধারকদের পিছু ছাড়ছেন না কেউ কেউ। মাস খানেক আগে বিএনপির ৭-৮ জন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শুধুমাত্র বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমানের নাম শোনা যাচ্ছিলো। সময়ের সাথে সাথে ঘুরে গেছে নির্বাচনের বাতাস। দিনদিন আ.লীগ সমর্থন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বর্তমানে আ.লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী সংখ্যা ৪ জন, বিএনপির ৮ জন। এছাড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে অসংখ্য কাউন্সিলর প্রার্থীও মাঠ চষছেন। পুরোনোদের পাশাপাশি বসে নেই নতুনরাও। এবারের দর্শনা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে আ.লীগের সমর্থন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, তরুণ সমাজসেবক আব্দুল হান্নান ছোট, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ মো. হাসান ও নাহিদ কবীর মনু।
এছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক মেয়র, বিএনপির প্রবীণ নেতা মহিদুল ইসলাম, দর্শনা পৌর যুবদলের সভাপতি এনামুল হক শাহ মুকুল, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট, সাবেক যুবদল নেতা নাহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন রিংকু, যুবদল নেতা জালাল উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর সাংবাদিক শরীফ উদ্দীন। এবারের নির্বাচনে আ.লীগ ও বিএনপির এক ডজন প্রার্থী মাঠে থাকলে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থীর নাম এখনো পর্যন্ত শোনা যায়নি। তবে অনেকেই মন্তব্য করে বলেছে, সময়ের ব্যবধানে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। দলের আশীর্বাদের পর প্রার্থী সংখ্যা কমতেও পারে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা মাত্র। দর্শনার গুরুত্বের কথা ভেবেই ১৯৯২ সালে তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়নকে বিভক্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় দর্শনা পৌরসভা। আলাদাভাবে গঠন করা পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮-২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত দর্শনা পৌরসভা। দর্শনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার আড়াই যুগ ধরধর। এরই মধ্যে দর্শনা পৌরসভাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়েছে। বার বার হয়েছে ক্ষমতার সিংহাসন বদল। পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর এবার উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে দর্শনায়। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত ঘেষা স্রোতশীনি ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে একমাত্র শিল্প শহর দর্শনা। এ শহরের রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম কেরুজ চিনিকল ও ডিস্টিলারি কমপ্লে¬ক্স, একটি আন্তর্জাতিকসহ দুটি রেল স্টেশন, স্থলবন্দর ইয়ার্ড, কাস্টমস সার্কেল কার্যালয়, চেকপোস্ট, সরকারি কলেজ, উপজেলা পশু হাসপাতাল, পৌর মার্কেট, দুটি বাজার, থানা, ও সরকারি বে-সরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কেরুজ চিনিকল, দর্শনা মেমনগরে নীলকুঠির, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি। রাজনৈতিক পেক্ষাপটের ক্ষেত্রেও দর্শনার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসিহীম। দর্শনায় সবকটি রাজনৈতিক দলের জেলার শীর্ষ নেতাদের অবস্থান এ শহরে। সব মিলিয়ে জেলার মধ্যে দর্শনার গুরুত্বের কোন কমতি নেই। এ গুরুত্বের কথা ভেবেই তৎকালীন সমাজ সেবকরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নীত করে দর্শনাকে।
১৯৯১ সালের ২৭ নভেম্বর দর্শনাকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয় পরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দামুড়হুদা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। সবশেষ দর্শনা পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ গ্রহণ করেন ফেব্রুয়ারি মাসে। এবারের নির্বাচনে দর্শনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫২০। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৭২ ও মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৯৪৮।