আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় শিশু অপহরণ মামলায় গ্রেফতার ৫ আসামির মধ্যে ২ জন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। নিজেদেরকে শিশু অপহরণের সাথে সম্পৃক্ত করে চুয়াডাঙ্গার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আলমডাঙ্গায় গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় তারা জবানবন্দী প্রদান করেন।
ওয়াকিবহালসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার ৪ বছরের শিশু কাজী ফারহানকে অপহরণ মামলার গ্রেফতার হওয়া ৫ আসামির মধ্যে গতকাল শুক্রবার দু আসামি আলমডাঙ্গা আনন্দধামের মিজানুর রহমানের ছেলে শাওন ও আসাননগরের মৃত আকমলের ছেলে খোরশেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। গতকাল বেলা ১১টায় বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দীতে তারা এ অপহরণে জড়িত গ্রেফতার হওয়া ৫জন ছাড়াও আরও অনেকের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করা হয়েছে। এমনকি অপহরণের সাথে জড়িতরা আন্তঃজেলা মাদকব্যবসার সাথে জড়িত থাকার তথ্য প্রদান করেছে।
এ সময় তারা জানান, ১৫ দিন পূর্বেই তারা এ অপহরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। এ অপহরণ পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড ছিলো অপহৃত শিশুর চাচা কাজী সুমন। তবে গ্রেফতার হওয়া ৫ জনই তারা এ অপহরণের সাথে জড়িত। এ ছাড়া তাদের সাথে আরও যারা এ ঘৃণ্য অপহরণের সাথে জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করেছে তারা। এমনকি তারা সকলেই আন্তঃজেলা মাদকব্যবসার সাথে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে। সেই মাদকব্যবসার টাকা এই অপহরণের কাজে ব্যয় করেছে বলেও স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। যে বাড়িতে শিশুটিকে রাখা হয়েছিলো সেই বাড়ির নারীকে (গ্রেফতার রাশেদা খাতুন) ১ সপ্তার জন্য বাড়ি থেকে সরে অন্যত্র থাকার জন্য অগ্রীম ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এমন অনেক কাজের জন্য মাদকব্যবসার টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছে অপহরণ কাজে। তবে কোনো শত্রুতার কারণে না, শুধুমাত্র টাকার জন্যই এ শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকেলে আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার দন্তচিকিৎসক কাজী সজীবের ৪ বছরের শিশুপুত্র কাজী ফারহান বাড়ির সামনে খেলছিলো। সে সময় দুজন মোটরসাইকেলে এসে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে রাতে কাজী সজীবের মোবাইলফোনে রিং দিয়ে অপহরণকারীরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হলে শিশুটিকে উদ্ধারে সন্ধ্যার পর পুলিশ অভিযান শুরু করে। ১ এপ্রিল ভোর ৩টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযান টিম আলমডাঙ্গার হাউসপুর এলাকার জিকে ক্যানেলপাড়ের একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। এ সময় আটক করা হয়েছে শিশুর চাচাসহ পাঁচজনকে। আটককৃতরা হল আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার কাজী লালের ছেলে অপহৃত শিশুর চাচা কাজী সুমন (৩০), আসাননগরের মৃত আকমলের ছেলে খোরশেদ আলী (২৫), আলমডাঙ্গার হাউসপুরের মৃত লুতফর রহমানের ছেলে আকাশ (২০), মিজানুর রহমানের ছেলে শাওন (২৪) ও একই এলাকার সেলিমের স্ত্রী রাশেদা খাতুন (৩৫)।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, শিশুটির বাবার একটি লিখিত অভিযোগের পর অভিযান শুরু করে পুলিশ। শহরের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। সারারাত অভিযানের পর মধ্যরাত ৩টার দিকে হাউসপুর এলাকার আট কপাটের নিকটবর্তী জিকে ক্যানেলপাড়ের একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী কাজী সুমনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তিনি আরও জানান, সুমনই অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।