আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার বিপুল পরিমাণ অর্পিত সম্পত্তির দখল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি উভয়পক্ষের মামলার ১২ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার রাতে আলমডাঙ্গা থানার এসআই কামরুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে দুই গ্রুপের ১২ জনকে গ্রেফতার করে।
জানা যায়, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার বিবাদমান ১৫২ বিঘা অর্পিত সম্পত্তির নিজেদের দখলে নিতে এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ জোয়ার্দ্দার ও অন্যপক্ষে বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন ছত্রপাড়া গ্রামের লাল খাঁ। বিরোধী গ্রুপের জমিতে ধান লাগানোর জন্য চারা দেয়ার বিষয়ে গত ১২ জুন দুপুর আড়াইটায় শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপ স্থানীয় ছত্রপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনা করছিলো। সে সময় বিরোধীপক্ষের শহিদুল পাঠান ও তার স্ত্রী বিষয়টি ভিডিও ধারণ করছিলেন। এ ঘটনা দেখে ফেলে শরিফুল জোয়ার্দ্দার গ্রুপ তাদের তাড়া করে ও শহিদুল পাঠানকে মারধর করেন। এরই জের ধরে ওইদিন রাত পৌনে ৩ টার দিকে লাল খাঁ গ্রুপের জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে শরিফুল জোয়ার্দ্দার পক্ষের মৃত মুলুক চাঁদের ছেলে ফজলুল হককে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।
এ ঘটনার জের হিসেবে লাল খাঁ গ্রুপের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রবেজান খাতুন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১০ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। অপরপক্ষে, শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপের অভয়নগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম টিলু বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১৫ ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গত সোমবার দিনগত রাতে উভয়পক্ষের ১২ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে লাল খাঁ গ্রুপের ৫ ও শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।
লাল খাঁ গ্রুপের গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ছত্রপাড়া গ্রামের ইব্রাহীমের ছেলে শামসুল ইসলাম (৪২), সেকেন্দার আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৭), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩), লাল খাঁর ছেলে মোস্তাক আহমেদ (২১) ও মতিয়ার রহমানের ছেলে শরিফ উদ্দীন (২৫)।
অপরদিকে, শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপের গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ছত্রপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে রাশিদুল ইসলাম (৩৫), মৃত ঝড়ু জোয়ার্দ্দারের ছেলে শরিয়ত জোয়ার্দ্দার (৩৮), বদর উদ্দীন শাহ’র ছেলে আলেপ (৪৯), মৃত হবিইবর জোয়ার্দ্দারের ছেলে শরিফুল জোয়ার্দ্দার (৩৭), লুতফর রহমান সরদারের ছেলে তারেক সরদার (২৫), ইদু বিশ্বাসের ছেলে ঝন্টু বিশ্বাস (২৮) ও মৃত মোজাহার ম-লের ছেলে রফিজ ওরফে মফিজ (৬০)। এদেরকে গতকালই সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়াও সিআর মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি চিৎলা গ্রামের লুলু মোল্লার ছেলে আবু সাঈদকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
একই ঘটনায় ইতোপূর্বে পুলিশ এক পক্ষের নেতা শরিফুল জোয়ার্দ্দারসহ উভয়পক্ষের মোস্তাফিজুর ও সাইফুল ইসলামকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল।
এলাকাসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য ক্ষিতীশ মজুমদার ’৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তার রেখে যাওয়া ১৫২ বিঘা জমি শত্রু সম্পত্তি বা বাংলাদেশে পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এই বিরাট সম্পত্তির লোভে ছত্রপাড়া ও অভয়নগর দুগ্রামবাসী দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দখলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। সম্পত্তি দখলের জন্য পরষ্পর গ্রুপের রক্ত ঝরাতে তারা রক্তলোলুপ হয়ে ওঠে। এ বিবাদে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ গেছে কয়েকজন গ্রামবাসীর। আহত হয়েছেন অনেকে। যুগের পর যুগ ধরে চলমান এ দ্বন্দ্ব। ক্ষিতীশ মজুমদারের ১৫২ বিঘা জমির মধ্যে বেশ কিছু জমি অনেকে জাল দলিল তৈরি করে নিয়ে দখলের অপচেষ্টা করে আসছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পাতি নেতারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে, এমনকি থানা পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সমস্ত সম্পত্তি নিজেরা দখলের অপচেষ্টা করেন। এই নিয়ে বিবাদ যুগ থেকে যুগান্তরব্যাপী বিস্তৃত হতে থাকে। গত কয়েক মাস আগে এ জমি নিয়ে আবারও বিবাদমান দুপক্ষের ভেতর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্রপাড়ার মধু মেম্বার তার লোকজন নিয়ে বিবাদমান জমিতে তার চাষ করা কচু তুলতে গেলে প্রতিপক্ষ লাল খাঁ গ্রুপ ফালা, থ্রোকচ, রামদা ও তলোয়ার নিয়ে হামলা করে ৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করে।