আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার ক্ষিতীশ মজুমদারের ১৫২ বিঘা জমি নিয়ে আবারও বিবাদমান দুপক্ষের ভেতর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্রপাড়ার মধু মেম্বার তার লোকজন নিয়ে বিবাদমান জমিতে তার চাষ করা কচু তুলতে গেলে প্রতিপক্ষ লাল খাঁ গ্রুপ ফালা, থ্রোকচ, রামদা ও তলোয়ার নিয়ে হামলা করে ৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার ১৫২ বিঘা অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে গ্রামে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আ.লীগ নেতা শরিফ জোয়ার্দ্দার ও অন্যপক্ষে বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন ছত্রপাড়া গ্রামের লাল খাঁ। লাল খাঁ গ্রুপের মধু মেম্বার তার দখলে থাকা জমিতে কচুর আবাদ করেছিলো। বর্তমানে ওই কচু মাঠ থেকে তুলে নেয়ার সময় হয়েছে। কচু তুলতে মধু মেম্বার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তিনি গত ৪ দিন আগে লাল খাঁ গ্রুপ থেকে শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপে যোগ দেয়। বিষয়টি লাল খাঁ গ্রুপ ভালোভাবে নিতে পারেনি। তারা শর্ত দেয় মধু মেম্বার নিজেরা ওই ক্ষেতের কচু তুলবে। শরিফ জোয়ার্দ্দারের কোনো লোককে তারা ওই সম্পত্তিতে দেখতে চায় না। কিন্তু গতকাল মধু মেম্বার শরিফ জোয়ার্দ্দার পক্ষের ১২-১৩ জন নেতা নিয়ে কচু তুলতে যায়। সংবাদ পেয়ে প্রতিপক্ষ লাল খাঁ গ্রুপের গঞ্জের আলীর ছেলে ইলিয়াস, শমসের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর, মনির উদ্দীনের ছেলে লাল্টু ও মিন্টুসহ বেশ কিছু ব্যক্তি তাদের ওপর চড়াও হয়। এই বিবাদে শরিফ জোয়ার্দ্দারের পক্ষের ৫ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এরা হলো ছত্রপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ইনাজ আলী (৪৫), মধু মেম্বারের ভাই সদু (৪৪), রফি উদ্দীনের ছেলে সমীর (৩২) ও নূর ইসলামের ছেলে সেলিম (৩৫)। তাদেরকে উদ্ধার করে হারদী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শরিফ জোয়ার্দ্দার পক্ষ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, মোবাইলফোনে প্রতিপক্ষ লাল খাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা কোনো অভিযোগ করবেন না। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বিঘা জমি মধুসহ তাদের পক্ষের লোকজন আবাদ করে। বাকী সব জমি শরিফুল জোয়ার্দ্দারের পক্ষ দখলে রেখেছে। তাদের ২০ বিঘা জমিতে মধুসহ অন্যান্য কয়েকজন কচু আবাদ করেছে। হঠাত করে মধু আমাদের জব্দ করতে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে তাদেরকে নিয়ে আমাদের পক্ষের সব জমির কচু তুলে নিতে গেলে আমাদের ক্ষেতচাষিরা বাঁধা দেয়। এ সময় মারামারি হয়েছে। আমাদের পক্ষের মানুষও আহত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য ক্ষিতীশ মজুমদার ৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তার রেখে যাওয়া ১৫২ বিঘা জমি শত্রু সম্পত্তি ও বাংলাদেশে পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এই বিরাট সম্পত্তির লোভে ছত্রপাড়া ও অভয়নগর দুগ্রামবাসী দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দখলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। সম্পত্তি দখলের জন্য পরষ্পর গ্রুপের রক্ত ঝরাতে তারা রক্তলোলুপ হয়ে উঠেছে। এ বিবাদে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ গেছে কয়েকজন গ্রামবাসীর। আহত হয়েছেন অনেকে। যুগের পর যুগ ধরে চলমান এ দ্বন্দ্ব। ক্ষিতীশ মজুমদারের ১৫২ বিঘা জমির মধ্যে বেশকিছু জমি অনেকে জাল দলিল তৈরি করে নিয়ে দখলের অপচেষ্টা করে আসছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পাতি নেতারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে, থানা পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সমস্ত সম্পত্তি নিজেরা দখলের অপচেষ্টা করেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও দোষারোপ করে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে নেতা উপনেতারা নিজেদের মনস্কাম পূরণের অপচেষ্টা করেন। এই নিয়ে বিবাদ যুগ থেকে যুগান্তরব্যাপী বিস্তৃত হতে থাকে।