চারদিনে চিকিৎসা নিয়েছে ৯ শতাধিক শিশু : সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা
আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় তিনশত শিশু ঠা-া-জ্বর ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকরা নিচ্ছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই নিউমোনিয়া আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গরম আবহাওয়া সঙ্গে বৃষ্টিপাত সব মিলিয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনে বর্ষায় বিভিন্ন রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে এ সময় শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। মরসুমি রোগের প্রকোপও বাড়ছে। এরমধ্যে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি শিশুরা। ঠা-া-জ্বর রূপ নিচ্ছে নিউমোনিয়ায়।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, ১-৪ সেপ্টম্বর এই চার দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট ৬১ শিশু ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ জন শিশুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়াও প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় তিনশত শিশু ঠা-া-জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশুই নিউমোনিয়ায় চিকিৎসকরা নিচ্ছে।
এদিকে রোগীর চাপ বাড়ায় জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে কোন শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের বেড খালি না পেয়ে অনেকে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সিজন পরিবর্তনের কারণে শিশু রোগীর প্রকোপ বেড়েছে। জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। বেড খালি না থাকায় অনেকে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু রোগীদের চাপ বেড়েছে। কোনো শয্যায় দুইজন আবার কোনো শয্যায় ৩জন করে শিশুরোগী একই সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছে। স্বজনরা ওই বেডেই গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। বেড খালি না পেয়ে অনেকে বারান্দায় চাঁদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখো গেছে। তবে বেশিরভাগই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
রোগীর এক স্বজন বলেন, একই বেডে দুইজন রোগী। দু’জনই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। আমরা কষ্ট করে চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে রোগীর অবস্থা এখন একটু ভালোর দিকে।
আর এক স্বজন জানান, ৩ দিন আগে ঠা-াজনিত কারণে আমার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার জ্বর ও ঠা-া ছিলো। পরে জানা গেল তার নিউমোনিয়া হয়েছে। তবে এখন কিছুটা ভালোর দিকে। শিশু ওয়ার্ডে জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন বলেন, গরম আবহাওয়া সঙ্গে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আবহাওয়ার পরিবর্তনে সঙ্গে ঠা-া-কাশি-জ্বর বাড়ছে শিশুদের। যেটা রূপ নিচ্ছে নিউমোনিয়ায়। তবে বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর ঠা-া যেন শ্বাস কষ্টে রূপ না নেয়। শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের সতর্ক করে পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসকরা। করণীয়গুলো শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেয়া যাবে না। গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করবেন। শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অন্য শিশুর কাছ থেকে দূরে রাখুন। সবসময় শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। সেইসঙ্গে পরিষ্কার পোশাক পরাতে হবে। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুতে হবে। শিশুর ডায়াপার ঘন ঘন পরিবর্তন করা উচিত। শিশুকে আড়াই বছর হলে শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর যাতে অতিরিক্ত ঠা-া বা গরম না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে ঠা-া পানি বা আইসক্রিম খাওয়াবেন না। পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়াতে হবে শিশুকে। শিশুকে সবসময় হাওয়া বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। নিউমোনিয়ার কিছু ভ্যাকসিন আছে। সেগুলো সময়মতো দিতে হবে। তাহলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায়। শিশুর অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ সামান্য অবহেলা শিশুর জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।