স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সকলকে সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকার উদাত্ব আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, আনন্দের ঈদ এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপনে উঠতিবয়সীরা যাতে বেপরোয়া না হয়ে ওঠে সেদিকে অভিভাবকসহ সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। কারণ আনন্দ করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোসহ বিভিন্ন অবৈধযানে উঠে ছুটতে গেলে পরিবেশ মুহূর্তের মধ্যেই বেদনাবিধূর হয়ে উঠতে পারে। এ লক্ষ্যে সকলকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলার হালচিত্র তুলে ধরে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ঈদের ছুটিতে ছিচকে চুরি রোধে পুলিশের পর্যাপ্ত টহলের থাকবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গৃহকর্তাদেরও এ দিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটনিং অব্যাহত থাকলেও অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের বাড়ির আশে পাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধপ্রবতা হ্রাস করা সম্ভব। ঈদ বাজারে চলাচলকারীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। পুলিশে অপ্রতুলতার বিষয়টি মাথায় রেখে সমাজের সচেতনমহল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটবে না। কোথাও কোনো সন্দেহমূলক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে পুলিশে খবর দেয়া সচেতন নাগরিকের দায়িত্বেরই অংশ।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার শুরুতে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসকের অনুমোতি নিয়ে গতসভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবীর হোসেন। সভায় পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, সিভিল সার্জন প্রতিনিধি ডা. আউলিয়ার রহমান, বিজিবি-৬ এর প্রতিনিধি, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শরিয়তউল্লাহ, পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুদা জান্নাত, জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুদ্দিন মুক্তা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় উঠে আসে চুয়াডাঙ্গা বাস-টার্মিনালের নিকট অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রসঙ্গ। জেলা শহরের শহীদ হাসান চত্বরসহ শহীদ আবুল কাশেম সড়ক ঈদ বাজারে যাতে ভয়াবহ যানজট না হয়; সেদিকে বাড়তি নজরদারি অব্যাহত রাখার বিষয়টি যেমন গুরুত্ব পায় তেমনই ঈদ বকশিসের নামে কৌশলে যাতে দলবদ্ধ বকাটেরা চাঁদাবাজি করতে না পারে সে বিষয়ও।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপস্থিত সদস্যদের মতামতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত প্রদানের পাশাপাশি সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বাল্য বিয়ে রোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, খাদ্যে ভেজাল রোধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য অতিরিক্ত আদায় রোধ, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, মানবপাচার প্রতিরোধ, সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রেখে দুর্ঘটনা যাতে না হয় সেদিকে সার্বিক নজর রাখার পুনঃপুনঃ তাগিদ দেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে চলমান অভিযানের পাশাপাশি একজন মাদকপাচারকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারায় বিজ্ঞ পিপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মাদক সকল অপরাধের মূল। ফলে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে জোরদার অভিযান অব্যাহত রাখার মধ্যদিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমাজের সচেতনমহলকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাদক থেকে মুখ ফিরিয়ে খেলার মাঠের দিকে যুবসমাজকে আগ্রহী করতে হবে। এ লক্ষ্যে অবশ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তরফে খেলার আয়োজনও করা হচ্ছে। মাদকবিরোধী সম্মিলিত প্রচেষ্টা অবশ্যই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।