রহমান মুকুল: ২০১৯ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জ এই তিন জেলা এডিপির ৩৭ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। এ তথ্যে আমরা যারপরনাই শঙ্কিত হই, ক্ষুদ্ধ হই। জনগণের মধ্যে যেসব কারণ অসন্তোষ দানা বাঁধে, তার মধ্যে এ ধরনের একচোখা উন্নয়ননীতি দায়ী। উন্নত দেশের থেকেও বাংলাদেশে অতি ধনী বৃদ্ধির দ্রুত হার, দেশের শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনীর সম্পদ ১২১ গুণ বেড়ে যাওয়া এবং সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশের কাছে থাকা মাত্র ১ শতাংশ সম্পদও হ্রাস পেয়ে চার ভাগের এক ভাগেরও নিচে নেমে আসা এক ধরনের বিপদ সংকেত। সারা দেশের উন্নয়নসাম্যতা বিনষ্ট করছে এই অপচক্র। দেশে কলকারখানা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তার মধ্যে অন্যতম এই উন্নয়নবৈষম্য।
তবে এতো আঞ্চলিকাবাদের নাগপাশে বন্দি থেকেও বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মানুষ সচেতনভাবে এ সংকীর্ণতার ঊর্দ্ধে থেকেছে সবসময়। আজোবধি। দেশের সর্বত্র আঞ্চলিকতার মাৎস্যন্যায়ের মধ্যে এ সচেতন দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমাদের বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। আঞ্চলিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছি। এমনকি আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একতাবদ্ধতার সহজ পথ ঠেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছি। আমাদের জলবায়ু এখন চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে গবেষণা করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মাওয়াতে পদ্মা সেতু না হওয়া আসলে আমাদের আঞ্চলিকভাবে অসচেতনতার ফল। ফলে উন্নয়নের দিক থেকে আমাদের অনেক পিছিয়ে থাকতে হবে।
দেশে নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে রেল যোগাযোগ মাধ্যম। অথচ, আমাদের ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে উন্নয়নে তেমন পদক্ষেপ নেই। এখানেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ কিংবা এলাকার রেলপথ উন্নয়নে প্রয়োজন আঞ্চলিক যুথবদ্ধতা। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে এ দাবিগুলি আদায় করতে পারে খুব সহজেই। এ তিন জেলায় পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আলমডাঙ্গার সার্বিক উন্নয়নে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল ‘৭১-এ ঢাকাস্থ আলমডাঙ্গা সমিতির সদস্যসহ ঢাকায় বসবাসকারী আলমডাঙ্গার সন্তানদের নিয়ে মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সরকারি বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। যেন হোটেল ‘৭১ এর আম্রকানন লাউঞ্জ হয়ে উঠে একখ- আলমডাঙ্গা। দেরিতে হলেও তাদের উদ্যোগ সফল হোক। এখন সময় এসেছে নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদেরকেও আঞ্চলিকতাকে আলিঙ্গন করার। এলাকার সার্বজনীন উন্নয়নের স্বার্থে সহাবস্থান নিতে হবে। এবং তা এখনি। আগামীকাল বেশি দেরি হয়ে যাবে। আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা করবে নতুন কোনো দায়িত্ব।