স্টাফ রিপোর্টার: হুইল চেয়ারে বসে বোরকা পরা নারী। বয়স বোঝা ভার। কোলে দু আড়াই সপ্তাহের শিশু। চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থান জামে মসজিদের সামনে ভিক্ষা করছেন তিনি। জীর্ণ শিশু নিয়ে ভিক্ষা করা নতুন কিছু না হলেও গতকাল সোমবার বাদজোহর মসজিদ থেকে বের হওয়া মসুল্লিদের অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে। অতোটুকু শিশু নিয়ে ভিক্ষা কেনো? এ প্রশ্ন তুলে যে জবাব মেলে তাতে অনেকেই থমকে যান। কেউ কেউ সাধ্যমতো সাহায্যের হাতও বাড়ান। এ সময়ই হাজির সেখানে প্রতিবেদক।
বোরকা পরা নারী শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি বললেন, “কোলের সন্তানের বয়স মাত্র ১৯দিন। তাও আবার সিজার করা। সংসারে সৎ শাশুড়ির অব্যাহত নির্যাতন নিপিড়নে স্বামী আক্তার বিশ^াসকে সাথে নিয়ে পথে নামতে হয়েছে। আপাতত ঠিকানা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন। বাড়ি যশোর মনিরামপুরের বাকাশপুরে। বাড়ি ছেড়ে পথে নেমে পেটের তাগিদেই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ভিক্ষার জন্য হাতপাততে হয়েছে।” সত্যি? বিশ^াস অবিশ^াসের দোলাচালে টলকানো সমাজে কার কথাই বা হুট করে বিশ^াস করা যায়? এ কথা শুনে দীর্ঘশ^াস ছেড়ে নারী বললেন, বিশ^াস না হলে এইদেখুন আমার সিজার করা সেলাইয়ের কাঁচা দাঁগ। বোরকা সরিয়ে তিনি যখন সিজার করা ক্ষত দেখাতেও দ্বিধা করছেন না তখন বিশ^াস না করে কি পারা যায়? ধরেই নেয়া হলে ওই সন্তান ওই নারীরই। বাড়ি ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হতে হলো কেনো? হুইল চেয়ারে একটু নড়ে বসে আম্বিয়া খাতুন বললেন, “আমার শ^শুরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে আমার স্বামী। শ^শুর দ্বিতীয় বিয়ে করে সৎ শাশুড়ি ঘরে আনেন। সৎ শাশুড়ি আমাদের কিছুই সহ্য করতে পারেন না। লোক ডেকে আমাদের নানাভাবে নির্যাতন করেন। চলতি মাসেরই প্রথম দিকে আমার সিজার করে ছেলে হয়। বড় আরও একজন ছেলে সন্তান রয়েছে। সিজার করে সন্তান নিয়ে বাড়ি ওঠার পর শাশুড়ির নানা চক্রান্তে বাধ্য হয়েই ঘর সংসার ছেড়ে পথে নেমেছি। জানিনা ভাগ্যে কি আছে। ওই অশান্তির সংসারের চেয়ে খেয়ে না খেয়ে ফুটপাথে ঘুমোনও অনেক ভালো।”