বাঁচলে একসাথে বাঁচব, মরলে একসঙ্গে মরবো, এমন প্রত্যয়ে স্বামী সঞ্জয় কুমারের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় নিজের কিডনি দান করেছেন নববধূ। আলোচিত ঘটনাটি বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মথুরাপুর ইউনিয়নের চরজোলাগাঁতী গ্রামের।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ভালবাসার সংসারের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা-উদ্বেগের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় আটকে আসে কণ্ঠ। স্ত্রীর কথা উঠতেই সঞ্জয় কুমার যেন অন্য উদ্দীপনার জগতে চলে যান। তিনি বলেন, জীবনে এর চেয়ে বড় কোনও প্রাপ্তি কী হয়! ভালোবাসার জন্যে মানুষ কি না করে? পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালবাসা যে এখনো রয়েছে তারই প্রমাণ দিয়েছেন সুবর্ণা রানী।
ধুনট উপজেলার চরজোলাগাঁতী গ্রামের অজিত হাওয়ালদারের ছেলে সঞ্জয় কুমারের (২৬) সাথে প্রতিবেশী গজেন হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুবর্ণা রানীর (১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে পারিবারিক সম্মতিতে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। কিন্ত বিয়ের দুই মাস পরই ভালোবাসার সংসারে বিভীষিকা নেমে আসে। ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল সঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সঞ্জয়ের শারীরিক পরীক্ষার পর জানতে পারেন তার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। তাই দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এদিকে, কিডনি কিনে তা প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন লাখ লাখ টাকা। যা কখনই সঞ্জয়ের পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। ফলে হতাশায় পড়েন সঞ্জয় কুমার।
এ অবস্থায় সঞ্জয়ের মা ইতি রানী ছেলেকে একটি কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! চিকিৎসক ইতি রানীর শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন তার একটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তাই মায়ের পক্ষে ছেলেকে কিডনি দান করা সম্ভব হলো না। ভাগ্যক্রমে সঞ্জয়ের সাথে তার স্ত্রী সুবর্ণা রানীর কিডনি মিলে যায়। তাই স্ত্রী চাইলে তার দুটি কিডনির মধ্যে একটি তার স্বামীকে দিতে পারবেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্বেচ্ছায় কিডনি দিতে রাজি হয়ে যান সুবর্ণা রানী। ১১মার্চ ঢাকা শ্যমলী সিকেডি এন্ড ইউরোলজী হাসপাতালে দুই জনেরই একসাথে অপারেশন হয়। অপারেশন করে স্বামীর অকেজো দুইটি কিডনি ফেলে দিয়ে স্ত্রীর দেয়া একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। আপাতত দু’জনে হাসপাতালের কাছেই একটি ঘর ভাড়া করে রয়েছেন। অন্তত তিন মাস হাসপাতালের কাছাকাছি থেকে প্রতিস্থাপন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সামাল দিতেই এই ব্যবস্থা। বর্তমানে সিকেডি এন্ড ইউরোলজী হাসপাতালে অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলামের নিবিড় পর্যবেক্ষণে স্বামী-স্ত্রী দুজনই সুস্থ আছেন।