স্টাফ রিপোর্টার: সন্তান থাকবে কার কাছে! বাবা না মা। এ নিয়ে চলছে আইনি লড়াই। সহসাই এ লড়াই শেষ হওয়ার নয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এক ধাপ আইনি লড়াই শেষে এখন দুই শিশু সন্তান কার জিম্মায় থাকবে তার শুনানি হবে ঢাকার পারিবারিক আদালতে। ওই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য সহকারী জজ দ্বিতীয় অতিরিক্ত পারিবারিক আদালতকে সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালত বলেছে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে হবে। ইতোমধ্যে বেরিয়েছে আপিল বিভাগের পুর্ণাঙ্গ রায়। সেই রায়ে বলা হয়েছে, পারিবারিক আদালতের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশু সন্তান থাকবে তাদের মা ডা. এরিকো নাকানোর কাছে। তবে বাবা ইমরান শরীফ সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন সে কথাও রায়ে বলা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক আদালতের রায় এলে জানা যাবে সন্তান কার জিম্মায় থাকবে। তবে কোর্ট বাবা বা মা যার পক্ষেই সিদ্ধান্ত দিক না কেন তাতে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিলে যাবেন। সেই আপিল জজ আদালত থেকে হাইকোর্ট এবং সর্বশেষ আপিল বিভাগে গড়াবে। তাই সহসাই এই আইনি লড়াই শেষ হবে না।
তবে তারা বলছেন, সন্তানদের সর্বোত্তম স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই বাবা-মায়ের উচিত সঠিক সিদ্ধান্তে আসা।
এরিকো নাকানো জাপানের নাগরিক। পেশায় অনকোলজি বিষয়ক চিকিৎসক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ একজন প্রকৌশলী। ২০০৮ সালের ১১ জুলাই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বসবাস করতেন টোকিওতে। এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তাদের তিন সন্তান। এদের বয়স যথাক্রমে ১১, ৯ ও ৭ বছর। দু’জনের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় গত বছর বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। তবে সেই বিচ্ছেদ এখনো হয়নি।
ওই বছরের ২১ জানুয়ারি স্কুল থেকে ফেরার পথে বড় দুই শিশু সন্তানকে ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ইমরান শরীফ। ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে ওই দুই সন্তানকে নিজের জিম্মায় নিতে মামলা করেন। ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করার পর ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।
তবে গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত ইমরানের শরীফের জিম্মায় থাকা দুই সন্তানকে এরিকোর জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দুই সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসায় টোকিও আদালতের সেই আদেশ আর বাস্তবায়িত হয়নি।
২১ জুলাই বাংলাদেশে আসেন ডা. এরিকো। দুই সন্তানকে উদ্ধারে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট করেন তিনি। ওই রিট বিচারাধীন থাকাবস্থায় বাবা ও মাকে সমঝোতায় আসতে একাধিকবার সময় দেয় আদালত। কিন্তু এরিকো ও ইমরান সমঝোতায় পৌঁছুতে ব্যর্থ হন।