মহেশপুরে আড়াই মাসে এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি

 

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরে আমন মরসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরুর আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ নভেম্বর এ অভিযান শুরু হয়। বাজার দরের তুলনায় সরকারি দাম কম, প্রচারণা ও তদারকি না থাকা, কর্মকর্তাদের অনিয়ম, কৃষক হয়রানিসহ নানা কারণে খাদ্যগুদামে কৃষকের ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়ে ধান সংগ্রহ করা যাবে কি-না সে বিষয়েও মাথাব্যথা নেই খাদ্য কর্মকর্তাদের।

জানা গেছে, উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১১৪৫ টন। নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের অনলাইনে আবেদন করার কথা থাকলেও কেউ আগ্রহ দেখাননি। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, আগের বছরগুলোয় ধানের সরকারি দর বাজারের চেয়ে বেশি থাকায় প্রকৃত কৃষকরা সুযোগ পাননি। ফলে এবার খোঁজ রাখেননি অনেকে। যারা গুদামে ধান বিক্রি করেছেন, তাদের রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, এ আমন মরসুমে উপজেলার ১৮ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ফলনও মোটামুটি ভালো। উৎপাদন হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৭ টন ধান এবং চাল ৫৮ হাজার ৭২৫ টন।

কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, খাদ্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক পদে পদে হয়রানি, ওজনে বেশি নেয়া নিত্যদিনের ঘটনা। অভিযানের বিষয়ে এ বছর তেমন প্রচারণা নেই। সে কারণে সঠিক তথ্য জানেন না অনেকে। খাদ্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন। ব্যবসায়ী ও দালালদের ওপর নির্ভরশীল তারা। খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু হেনা মোস্তফা কামাল যাবতীয় বিষয় দেখভালের কথা থাকলেও তিনি অফিস করেন না। ওসিএলএসডি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

নিমতলা গ্রামের কৃষক শাহাজান আলী জানান, নিয়মিত ধানের আবাদ করেন তিনি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করেন। আগে দু-একবার খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন। তবে কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছেন। এ জন্য আর আগ্রহ নেই তার। একই ধরনের অভিযোগ মুন্ডুমালা গ্রামের কৃষক নাজমুল হুদার। তিনি বলেন, কৃষকের নাম ব্যবহার করে কমিশনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে বেশি আগ্রহী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হাবিবুর রহমানের দাবি করেন, কৃষকদের কোনো হয়রানি করা হয় না। প্রকৃত কৃষকের নামের বিপরীতে ধান কেনা হয়। কৃষক সেজে অন্য কেউ ধান দিলে কিছু করার থাকে না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, সরকার নির্ধারিত দিনে ধান সংগ্রহের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে দাম বাজারমূল্যের তুলনায় কম হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ নেই। গুদামে কৃষক হয়রানির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। এ ছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় নিয়মিত অফিস করা সম্ভব হয় না তার। এতে দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হয় না বলে দাবি এ কর্মকর্তার।

Comments (0)
Add Comment