স্টাফ রিপোর্টার: সাইফ জাহান ও আহসান আলমের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতরাতে এ মামলা রুজু করা হয়। মামলায় বলা হয়েছে, সাংবাদিক নামধারী সাইফ জাহান তার ফেসবুক আইডিতে ওষুধ কেলেঙ্কারি ও আহাসন আলম পত্রিকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ দিয়ে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টিকরাসহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের মর্যাদাহানি করার পাশাপাশি করোনাকালে চিকিৎসা সেবাদান ব্যাহত করেছে। সাইফ জাহান ও আসহান আলম ফেসবুকে বানোয়াট তথ্য ছড়িয়েছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা গতরাতেই রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, সাড়ে ৪ কোটি টাকা নয়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওষুধ পথ্যের জন্য বরাদ্দ এসেছে ৯ কোটি ২৬ লাখ। একই সাথে বরাদ্দ পাওয়া যায় আসবাবপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য ১১ কোটি ৮০ লাখের সামান্য বেশি। বরাদ্দের এ টাকা সরাসরি ব্যয়ের সুযোগ যেমন এনএসআর কমিটির নেই, তেমনই ঠিকাদার নিযুক্তের নিমিত্তে গঠিত দরপত্র যাচাইয়ের জন্যও গঠন করা হয় পৃথক কমিটি। তাহলে দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাতের প্রশ্ন উঠছে কেন? দরপত্র যাচাই কমিটি এবং এনএসআর কমিটির দুটির একটিরও প্রধান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির নন। অথচ তিনিই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে গুঞ্জনের বরাত দিয়ে একটি পত্রিকাসহ অনলাইন প্যাটেলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা শাখা গতকাল বুধবার এক বৈঠকে বসে বিশদ আলোচনা শেষে অভিযুক্ত দুজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণসহ তাদের হাসপাতাল এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৫টায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএমএ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, সভায় বিএমএ চুয়াডাঙ্গা শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান, সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. মো. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামীম কবির, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. আওলিয়ার রহমান উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় পত্রিকায় গত ২৮ ও ৩০ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বিশদ আলোচনা করে তা সঠিক নয় বলে সকলে একমত হন। মিথ্যা বানোয়াট মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি ও মর্যাদা ক্ষুণœ করায় সাইফ জাহান ওরফে সাইফুল ইসলাম এবং আহসান আলমের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে পরামর্শ দেয়া হয়। একই সাথে অভিযুক্ত দুজনকে হাসপাতাল সিভিল সার্জন কার্যলয় এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কোভিড-১৯ মহামারিকালে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত করার যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সভাসূত্র বলেছে, সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তা যেমন তথ্য নির্ভর নয়, তেমনই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কেনো না, ওষুধ ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ আসে ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকার কিছু বেশি। আর আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকার কিছু বেশি। বরাদ্দকৃত অর্থের প্রেক্ষিতে নিয়ম মেনে গঠন করা হয় দরপত্র যাচাই কমিটি। পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠান ওষুধ পথ্য ও আসবাবপত্রসহ যাবতীয় মালামাল সরবরাহের দায়িত্ব পায়। দরপত্র যাচাই বাছাই ঠিকাদার নিযুক্ত এবং মালামাল গ্রহণের জন্য গঠিত পৃথক কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে। ওষুধ পথ্য ও মালামাল গ্রহণের নিমিত্তে গঠিত এনএসআর কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। আরএমওসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন কমিটির সদস্য। ওষুধ পথ্য ও মালামাল ইতোমধ্যেই বুঝে নিয়েছেন এনএসআর কমিটি। ওষুধ পথ্যসহ যাবতীয় মালামালের বর্ণনা যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, তেমনই তার অস্তিত্বও রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। ওষুধ পথ্য ও আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের নিমিত্তে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কমিটি সরাসরি কিছু কিনতে পারে না। তাহলে আত্মসাৎ হলো কিভাবে?
গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শামীম কবির বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা গোরস্তানপাড়ার আহসান আলম ও দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার সাইফ জাহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আসামিদ্বয়কে ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।