স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার জয়রামপুরে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার জমি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ওই বৃদ্ধার জমি হাতিয়ে নিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন তারই সৎ ভাইসহ কয়েকজন। সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কাগজপত্রে টিপসই করিয়ে নেন তারা। এমনকি ৫৮ বছর বয়সী ওই নারীর বিয়ের জাল কাবিনও তৈরি করা হয়। এ ঘটনায় গত সোমবার চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জয়রামপুরের মৃত আয়েব আলীর মেয়ে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিজিয়া খাতুন। অভিযোগে বিবাদী করা হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলার কাদিপুর গ্রামের মৃত কাদের আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন, জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার জুব্বার ম-লের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, একই গ্রামের মৃত আয়েব আলীর ছেলে রিজিয়া খাতুনের সৎ ভাই বজলুর রহমান, বর্তমানে কাদিপুর গ্রামে বসবাসরত মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আবুল কালাম ও জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার মৃত হাফিজুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুল আলম পলাশ।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মৃত আয়েব আলীর মেয়ে রিজিয়া খাতুন জন্ম থেকেই দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হওয়ায় রিজিয়ার নামে তিন বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন তার পিতা। পিতার মৃত্যুর পর ওই জমি কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন রিজিয়া খাতুনের ভাই বজলুর রহমান। তাকে জমি পাইয়ে দিতে বিভিন্ন সময় রিজিয়া খাতুনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন বিবাদী আলমগীর, দেলোয়ার, কালাম ও পলাশ।
এতে রাজি না হাওয়ায় অন্য কৌশল অবলম্বন করেন তারা। এরপর রিজিয়া খাতুনের কাছে গিয়ে সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলেন তার চাচাতো ভাই জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার দেলোয়ার হোসেন। তার কথায় বিশ্বাস করে সকল কাগজপত্রে টিপসই দেন রিজিয়া খাতুন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, সরকার থেকে ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বর্তমানে কাজিপুর গ্রামে বসবাসরত জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আবুল কালামকে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে নিয়ে আসেন। পরে তারা হ্যাবা নামা দলিলে টিপসই করিয়ে নেন। এমনকি ৫৮ বছর বয়সী দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিজিয়া খাতুন অবিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের ১ জানুয়ারি জাল কাবিন তৈরি করেন তারা। তাদের ঝিনাইদের এক কাজির সীল স্বাক্ষর রয়েছে।
জাল কাবিনে রিজিয়া খাতুনের স্বামী সেজে ওই জমি রেজিস্ট্রি করে নেন দামুড়হুদার কাঁদিপুর গ্রামের মৃত কাদের আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন। গত ২৩ মার্চ দামুড়হুদা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক উজিরপুরের সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্র করা হয়।
অভিযোগ পত্রে রিজিয়া খাতুন আরো উল্লেখ করেন, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে তাতে কোনো ফল না পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন রিজিয়া খাতুন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন বলেন, মোবাইলফোনের মাধ্যমে কথার বলার এক পর্যায়ে আমরা বিয়ে করেছি। বিয়ের পর রিজিয়া খাতুন আমার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। তাছাড়া রিজিয়ার ভাইও স্বাক্ষী আছে। কোথা থেকে বিয়ে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার এক কাজির মাধ্যমে আমরা বিয়ে করেছি। তবে এ প্রতিবেদকের কাছে ঝিনাইদহের এক কাজির মাধ্যমে বিয়ে পড়ানোর কাবিন রয়েছে। এ বিষয়ে আলমগীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন কোর্টের মাধ্যমে এভিভেডিট করা হয়েছে।