স্টাফ রিপোর্টার: পরীক্ষা করালেই শনাক্ত, ৮৩ ভাগ রোগী ঢাকাতেই, মৃত্যুও সর্বোচ্চ অনেকটা উপসর্গ ছাড়া নীরবে ছড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ। আক্রান্তের কেউ হালকা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাচ্ছেন, কেউ জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। গুরুতর উপসর্গ না থাকায় কেউ আবার পরীক্ষাই করাচ্ছেন না। ফলে শনাক্ত হচ্ছে না সংক্রমিত ব্যক্তি। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা হালকা কাশি বা গায়ে ব্যথার কারণে কৌতূহলবশত নমুনা পরীক্ষা করিয়ে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা গতকাল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দুইদিন ধরে হালকা কাশি হচ্ছিল। দুই ডোজ টিকাও নিয়েছেন। করোনার গুরুতর উপসর্গ না থাকলেও কৌতূহলবশেই নমুনা পরীক্ষা করান। ফল আসে পজিটিভ। এর পর থেকে বাসায় আইসোলেশনে আছেন। এদিকে শনাক্তের হার কম থাকলেও করোনায় এখনো সর্বাধিক মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত হচ্ছে ঢাকা বিভাগে, যা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৩১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯১ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ১৬১ জনই শনাক্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে, যার মধ্যে ঢাকা জেলাতেই ছিল ১৫২ জন। বাকি ৬৩ জেলায় শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ৩৯ জন। এই সময়ে মারা গেছেন দুজন, যার একজন ঢাকার বাসিন্দা। অন্যজন দিনাজপুরে মারা গেছেন। মহামারীর শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে শনাক্ত মোট রোগীর ৫৯ ভাগই ছিল ঢাকা বিভাগে আর ৪৮ ভাগ ঢাকা জেলায়। ১১ ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে সারা দেশে শনাক্ত মোট রোগীর ৮৩.১২ শতাংশ ছিল ঢাকা বিভাগে আর ৭৯.৬৫ শতাংশ ঢাকা জেলায়। এই সময়ে দেশে ১ হাজার ৯৩১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৬০৫ জনই ঢাকা বিভাগের। আর শুধু ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৮ জন। এ সাত দিনে মারা গেছেন ২৬ জন, যার মধ্যে ১০ জনই (৩৮.৪৬ শতাংশ) ঢাকা বিভাগের। রাজধানীর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে অনেকেরই তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসছে। দুই ডোজ টিকা নিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা সময়মতো চিকিৎসা নিলে সহজেই ভালো হয়ে যাচ্ছেন। দেরি করলে অনেক সময় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। কম বয়সী অনেকের তেমন উপসর্গ দেখা না গেলেও তারা সংক্রমিত হয়ে অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস, হার্ট, কিডনির মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি বাড়ছে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায় আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়েছে অনেককে। এজন্য উপসর্গ কমে গেছে। তবে কভিড দূর হয়ে যায়নি। পরীক্ষা করালে ধরা পড়ছে। অনেকেই হয়তো সংক্রমিত হয়ে আমাদের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাবধান থাকতে হবে, না হলে রোগী বেড়ে যাবে। রোগী বাড়লে মৃত্যুও বাড়বে। বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের জন্য ঝুঁকি বেশি।’
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন তার ৮০ শতাংশের বেশি ভ্যাকসিন পাননি। আর ভ্যাকসিন নিয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন ১৮ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ। মৃতের বড় অংশই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বক্ষব্যাধি, থাইরয়েড, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে ভুগেছেন। গত ২৯ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। এর ৩২ জনেরই (৬৪ শতাংশ) দীর্ঘমেয়াদি রোগ ছিল। তবে সারা দেশ বিবেচনায় ঢাকায় মৃত্যুহার কিছুটা কমেছে। মহামারীর শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৪৩.৬৭ ভাগ ঢাকা বিভাগে হলেও গত সপ্তাহে তা ৩৯ শতাংশের নিচে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের নমুনা পরীক্ষায় গড় শনাক্তের হার ছিল ১.১৭ শতাংশ। তবে ঢাকা বিভাগে এ হার ১.৪৭ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি ২.৮২ শতাংশ শনাক্তের হার ছিল রংপুর বিভাগে। আগের দিন ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ১.০২ শতাংশ। এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ০.৪৫ শতাংশ। তবে গত সপ্তাহের সাত দিনেই সর্বোচ্চ শনাক্ত হার ছিল রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বা খুলনা বিভাগে। এর মধ্যে এক দিন রাজশাহী বিভাগে ও এক দিন রংপুর বিভাগে ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় শনাক্তের হার।