বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনালী খাতুন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপারেশন করাতে হবে জানিয়েছেন ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন। অন্যথায় যে কোনো মুহূর্তে নিভে যেতে পারে জীবন প্রদীপ। অপারেশনের ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করতে না পেরে ভূমিহীন দিনমজুর পিতার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে না পেরে ১৪ বছর আগে মেজো মেয়েকে হারিয়েছেন চিরদিনের জন্য। সেই মৃত্যু শোক ভুলতে না ভুলতে ছোট মেয়েকেও হারাতে বসেছেন ভূমিহীন দিনমজুর ভ্যানচালক পিতা আশাদুল হক। তিনি ছোট মেয়ে সোনালীর অপারেশন করাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবুর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার নতুন বাস্তুপুর গ্রামের ভূমিহীন ভ্যানচালক আশাদুল হক (৬২) জীবন জীবিকার তাগিদে পৈতৃক ভিটে ছেড়ে স্বপরিবারে নতুন হাউলী চলে আসেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নতুন হাউলী মাঠপাড়ায় অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। তার সংসারে একে একে ৪ মেয়ের জন্ম হয়। বড় মেয়ে শ্যামলীর বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো মেয়ে শেফালী মারা গেছেন ১৪ বছর আগে। সেজ মেয়ে বৈশাখী (১৩) বাস্তুপুর দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে আর ছোট মেয়ে সোনালী (১১) হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। মাত্র দেড় বছর বয়সেই থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় ছোট মেয়ে সোনালী। তাকে প্রতিমাসে ব্লাড দিতে হতো। এদিকে পরিবারের অন্যাদের জন্য দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা, অন্যদিকে অসুস্থ মেয়ের প্রতিমাসে ব্লাড কেনার টাকা জোগাড় করাটা একজন ভূমিহীন ভ্যানচালক পিতার অনেকটাই কষ্টের তা সহজেই অুনমেয়। ভ্যানচালক পিতা যখন ব্লাড কেনার টাকা গোছানোর জন্য মরিয়া ঠিক তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় দামুড়হুদার সেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন সন্ধিমেলার কর্ণধর মাসুদরানা। তিনিই ওই শিশু শিক্ষার্থী সোনালীর জন্য ব্লাড সংগ্রহের কাজটি করে দিতেন। পর্যায়ক্রমে নিজেও দিয়েছেন ৮ ব্যাগ ব্লাড। মাত্র দেড় বছর বয়সে থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত সোনালীর বয়স এখন ১১। বর্তমানে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে আরও একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। দেহের স্পীলিন (পিলে) বড় হয়ে টিউমার আকার ধারণ করেছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালেও নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলনের কাছে নেয়া হয় শিশু শিক্ষার্থী সোনালীকে। তিনিও বলেছেন অপারেশন ছাড়া বাঁচানো সম্ভব নয় সোনালীকে।
এ দিকে মেয়ের অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভূমিহীন দিনমজুর পিতা আশাদুল হক। তিনি বলেছেন, মাসুদ পাশে না দাঁড়ালে হয়তো মেজ মেয়ের মতো ছোট মেয়ে সোনালীকেও হারাতে হতো অনেক আগেই। রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও ওই মাসুদরানাই সোনালীকে নিয়ে গেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। করিয়েছেন চিকিৎসা। কিন্ত শেষ রক্ষা হবে কী না জানিনা। মেয়ের মাথা খুব ভালো। কিন্ত অসুস্থতার কারণে সে নিয়মিত স্কুলেও যেতে পারে না। অন্যের জমিতে বসবাস করি। নিজের বলতে কিছুই নেই যে তা বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করাবো। বেশকিছুদিন যাবত আমি নিজেও অসুস্থ। হাপের সমস্যার কারণে আগের মতো আর কাজ করতেও পারিনে। মেয়ের অপারেশনের ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি করি, কার কাছে যায় এ রকম নানা চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে ভূমিহীন দিনমজুর পিতা আশাদুলের। আপনার বাড়ি বাস্তুপুরে আর এমপি সাহেবের বাড়ি রঘুনাথপুরে। আপনি এমপি সাহেবের কাছে বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকবার ভেবেছি যে, এমপি সাহেবের কাছে যাবো। কিন্ত আমরা গরীব মানুষ, তাই যাবো যাবো করেও ভয়ে যেতে পানিনি। তিনি মেয়ের অপারেশনের সুব্যবস্থার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবুসহ বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।