হাসমত আলী: দামুড়হুদা উপজেলায় পাটের ফলন এ বছর ভালো না। বর্তমানে বাজারমূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরা। সরেজমিনে দেখা যায়, পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে বর্ষার ভরপুর মরসুম হওয়ায় প্রয়োজনমত বৃষ্টির পানি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা পর্যন্ত যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান বাজারদরে পাট বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে কৃষকদের। এমনটাই আশঙ্কা করছেন উপজেলার সাধারণ কৃষকরা। দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, এ বছর দামুড়হুদা উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৬শ’ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে কম। দামুড়হুদার কয়েকটি এলাকায় আগাম পাটের চাষ করায় ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকের পাট বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। অনেক স্থানে পাটের আঁশ ছড়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে এর মধ্যে হঠাৎ করেই এ বছর গত পাটের বাজার মূল্য উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। পাটের ফলন মরসুমের শুরু থেকে বাজারে দাম ছিলো মণ প্রতি এক হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে এ সপ্তাহে পাটের বাজারদর কমে এক হাজার ৫শ’ থেকে এক হাজার ৭শ’ পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষক জামাত আলী বলেন, বর্তমানে মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬শ’ টাকা। বাজার অনুযায়ী পাটের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষকেরা। দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছির স্থানীয় কৃষক মো. জালাল বলেন, পাট ঘরে তুলতে যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান দাম অনুযায়ী বিক্রি করলে খরচ ওঠানো যাচ্ছে না লোকসানে পড়তে হচ্ছে। কষ্টটাই বৃথা যায়। বাজারে দাম কমে গেলে আমাদের মতো কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা ফসল ঘরে তুলে মজুদ করতে পারি না। টাকার জন্য বিক্রি করতেই হয়। মো. আব্দুর রাজ্জাক নামে অপর এক কৃষক বলেন, শুনতেছি সামনে আরও কমবে পাটের দাম। দাম কমতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ বলেন, পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ দেখা দিয়েছে। মজুদ করার মতো জায়গাও নেই আমাদের। দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের একটা অংশ পাট বিক্রি করছেন। তারা জানিয়েছেন, টাকা খরচ করে আবাদ করেছেন। পাট বিক্রি করে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করবেন। কেউ ঋণ করেছেন। এসব চাহিদা মেটানো এবং আগামী ফসলের জন্য জমি প্রস্তত করতে পাট বিক্রি করতেই হচ্ছে তাদের। তবে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম কম পেয়ে মজুদ করতে পাট কিনছেন বলেও জানা গেছে। দাম বাড়লে তখন বিক্রি করবেন তারা। উপজেলার অনেক স্থানেই পাট তুলে জমিতে ধানের চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। উঁচু স্থানের জমির পাট কেটে জাগ দেয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম আশা বলেন, গত সপ্তাহ েেথকে পাটের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে যে পাট ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন সেই পাট এক হাজার ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মনে হচ্ছে দাম আরও কমতে পারে। দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, এ উপজেলার আবহাওয়া পাট চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এ কারণে প্রতি বছরই এখানে পাটের ফলন ভালো হয়। চলতি বছরও ভালো ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজারে পাটের দাম কিছুটা কম তবে পাটের দাম বাড়লে কৃষকদের সন্তুষ্টি।