স্টাফ রিপোর্টার: একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা ও পাগল প্রায় হতদরিদ্র কৃষক আহসান আলী। করোনাকালীন সময়ে সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরাতে ধার কর্য ও সমিতির লোন নিয়ে অল্প টাকায় কিনেছিলেন এক জোড়া মহিষ। মহিষ জোড়া দেখতে স্বাস্থ্যবান না হওয়ায় কৃষক আহসান মহিষ জোড়াকে মোটাতাজা করার ইনজেকশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই ইনজেকশনই কাল হলো তার। হতদরিদ্র কৃষক আহসান আলী হরিশচন্দ্রপুর গ্রামের মো. ফজলুর রহমানের ছেলে ও কার্পাসডাঙ্গা বাজারের বিশিষ্ট টিন ব্যবসায়ী দেলোয়ারের চাচাতো ভাই।
দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রপুর গ্রামের এক অশিক্ষিত ভুয়া পশু চিকিৎসক হাবিল উদ্দীন ও তার ছেলে কবিরাজ খোকনের ভুল চিকিৎসায় হত দরিদ্র এক কৃষকের মহিষ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে কৃষক আহসান আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কৃষক আহসান আলী বাদী হয়ে গতকাল শনিবার দর্শনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভুয়া পশু চিকিৎসক মো. হাবিল উদ্দীন উপজেলার হরিশচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত হানেফ ম-লের ছেলে। তিনি পশু চিকিৎসার নামে সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিবন্ধন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কোনোপ্রকার প্রাথমিক জ্ঞান ছাড়াই এলাকায় পশু চিকিৎসার নামে সাধারণ কৃষকের সাথে প্রতারণা ও নিষ্পাপ জীবনগুলো নষ্ট করা ওই ভুয়া ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত মহিষ মালিকসহ এলাকাবাসী। কৃষক আহসান আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার চাচা হাবিল উদ্দীন গ্রামে প্রশু চিকিৎসা করে থাকেন। আমার মহিষের মোটা তাজা করা ইনজেকশন দেয়ার বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ চাইতে গেলে তিনি আমাকে কৌশলে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাকে দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে আমি সাত পাচ না ভেবে তাকে দিয়ে ইনজেকশন করার পর আমার মহিষটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে বিষয়টি জানালে তার ছেলে কবিরাজ খোকন কোথা থেকে কি গাছ নিয়ে এসে খাইয়ে দেয়। খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর মহিষটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনা বেগতিক দেখে বাবা ছেলে দুইজনই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তারা আর আমার বাড়ীতে আসেনি। একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশা না পেয়ে শেষমেষ দর্শনা থানায় একটি মামলা দায়ের করি।
এ বিষয়ে পশু চিকিৎসক মো. হাবিল উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার সাথে মোবাইল কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মহিষটিকে মারিনি, আমার কোনো দোষ নেই, আমি কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো না, এতে যে যা পারে করে নিক। দরকার পড়লে হাইকমান্ডে লাখ লাখ টাকা খরচ করবো তবু মাথা নত করবো না। এদিকে গোপন সূত্রে জানা গেছে, পশু চিকিৎসক মো. হাবিল উদ্দীন কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছেন। সামান্য মাঠের কামলা দেয়া হাবিল হঠাৎ পশু চিকিৎসক বনে যাওয়ায় গ্রামের সবাই অবাক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, খাতা আর কলম দিলে যে লোকটা নিজের নামটা পর্যন্ত লিখতে গিয়ে ১০টা কলম ভাঙে সেই লোক পশু চিকিৎসক এটা মানা যায় না। তিনি একটা ওষুধের নাম পর্যন্ত লিখতে জানেন না। সমাজে এই ধরনের লোকেরা সমাজটাকে দিন দিন ধবংস করে ফেলছে। তাই ভুয়া ডাক্তার হাবিল উদ্দীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত মহিষ মালিকসহ এলাকাবাসী।