বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামর বেশকিছু কৃষক ধানের জমিতে ব্যাবিলন এগ্রিসাইন্স কোম্পানির ক্রস আউট আগাছা দমন কীটনাশক ব্যবহার করে প্রতারিত হয়েছেন। আগাছার সাথে সাথে নষ্ট হয়ে গেছে ধানের চারা। কৃষকেরা তাদের ক্ষতির বিষয়টি ডিলার এবং কোম্পানির প্রতিনিধিকে জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি। অপর দিকে দায়িত্বরত কৃষি অফিসারকে অবহিত করলেও তাতে কর্ণপাত না করায় অফিসারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভুক্তোভোগী কৃষকেরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপেেজলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের বেশকিছু চাষি শীতকালীন ধানের চাষ করেছেন গ্রামের মাঠে। ধানের চারা রোপণের কিছুদিন পর ধানের জমির আগাছা দমনের জন্য কীটনাশকের দোকান থেকে ব্যাবিলন এগ্রিসাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ক্রস আউট ৩০ ডব্লিউপি পাউডার জাতীয় কীটনাশক জমিতে ব্যবহার করেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইউপি সদস্য আবু সালেহ মেম্বার, মনির হোসেন, কাউছার আলী, জহুরুল ইসলাম, আবু সেলিম, জালাল উদ্দিন, মন্টু, আজিবার রহমান, হানিফ শিকদার, রাজু, রেজা, জুলফাস, নুরজাহান বেগম, ইস্রাফিল, মোজাম্মেল, মিছির আলীসহ বেশকিছু কৃষকেরা জানান, ধানের জমিতে যেন আগাছা না জন্মায় তার জন্য কীটনাশকের দোকান থেকে ক্রস আউট কিনে জমিতে ব্যবহার করি। ব্যবহারের কয়েক দিন পর দেখতে পায় আগাছার সাথে ধানের চারাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন নতুন করে জমি চাষ করে ধান লাগানো সম্ভব না। কারণ শীতকালীন ধান চাষ আমাদের পারিবারিক বার্ষিক খাবার নিশ্চিত করার জন্য চাষ করে থাকি। আগাছা দমনের জন্য ব্যবহার করে এখন দেখছি ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি দোকানি, ডিলারকে জানানো হলেও কোন কর্ণপাতই করছে না। সেই সাথে আমাদের ব্লকে দায়িত্বরত কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলামকে মোবাইলফোনে জানিয়েছি তারও কোন খবর পাচ্ছি না। কৃষক কাউছার ও সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে দায়িত্বরত কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম পাকা রাস্তার অফিসার। তিনি মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে নামেন না। কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি কোম্পানির নিকট।
এদিকে অনেক কৃষক মন্তব্য করে বলেন, একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করলে কৃষকদের প্রতি অনীহা অবহেলার সৃষ্টি হয়। আবার পছন্দের কিছু ব্যক্তির সাথে গড়ে ওঠে বিশেষ সখ্যতা। যার কারণে কৃষকেরা হয় উপেক্ষিত। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিনে দেখে ফেরার পথে দেখামেলে তড়িঘড়ি করে মাঠে আসছেন দায়িত্বরত কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম। কৃষকদের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকদের অভিযোগ সঠিক না। মাঠে যেয়ে দেখি ধানের জমির কি অবস্থা। বিকেলে কয়েকজন কৃষক ফোনে জানান, কৃষি অফিসার আমাদের ধানের জমি দেখে বলেছেন, কীটনাশক ব্যবহারের পূর্বে আমার সাথে পরামর্শ করা দরকার ছিলো। পরামর্শ না নিয়ে চাষ করলে এর দায়ভার কৃষি বিভাগের না। এ ব্যাপারে ব্যাবিলন এগ্রিসাইন্স লিমিটেড কোম্পানির জেলা মার্কেটিং অফিসার মাজেদুল ইসলাম বলেন, চাষিরা এ কীটনাশকটি দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার করছে এমনটি তো ঘটেনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কি ঘটেছে। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে কীটনাশক ব্যবসায়ী ও কোম্পানির ডিলার আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কিনে এনে বিক্রি করি। এর দায়ভার আমার না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার বহণ করবে কোম্পানি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, কৃষকের কেউ ক্ষতি করলে কোম্পানি কিংবা ডিলার কেউ ছাড় পাবে না। তদন্তপূর্বক কোম্পানি এবং ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্রসাহ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি আমার লোকজন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।