কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এক নারীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিরা হলেন, ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম এলাকার বিশুর ছেলে মোস্তান ও মোস্তানের ছেলে গোলাম রেজা রোকন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, দোষী প্রমাণিত হওয়ায় গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-াদেশ দেন আদালত। সেদিন আদালতে দুই আসামি উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি মোস্তান ও রোকন মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এদিকে এ মামলার যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত অপর দুই আসামি ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের সাদুর ছেলে কাবুল ওরফে কালু এবং একই এলাকার মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে মিলন কারাগারে রয়েছেন।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ওই মামলার রায়ে চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ তাজুল ইসলাম। এ মামলায় পলাতক দুই আসামি মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, তিন সন্তানের জননী ওই নারী দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আল্লাহর দর্গা এলাকায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন এবং ভেড়ামারায় একটি ডালের মিলে চাকরি করতেন। সেখানে তিনি প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করতেন।
প্রতিদিনের মতো ২০০১ সালের ১২ আগষ্ট বিকেলের দিকে বাসা থেকে কর্মস্থল ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরদিন তিনি বাসায় না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন, ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া এলাকায় জনৈক আকরাম আলীর বাড়ির পাশে একটি বাঁশঝাড়ের মধ্যে একটি মরদেহ পড়ে আছে। পরে পরিবারের লোকজন তার মরদেহ শনাক্ত করেন।
পরিবার ও পুলিশ জানান, ১৩ আগস্ট দিবাগত রাতের যেকোনো সময় ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আসামিরা তাকে অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
ভেড়ামারা থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে নিহতের মা বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে থানার হত্যা মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। পরে ২০০৯ সালে জামিনে গিয়ে পলাতক ছিলেন তারা।
মামলার তদন্ত শেষে ভেড়ামারা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে গত ২৪ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।