আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের উদ্যোগে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে শিশু আব্দুর রহমানের পরিবারে। হাসি ফুটেছে আব্দুর রহমান ও তার বাবার মুখে। ছোট ভাইকে কোলে করে শিশু আব্দুর রহমানকে শহরে ঘুরে আর সাহায্য তুলতে হবে না। ভর্তি করা হবে মাদরাসায়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে একমাত্র উপার্জনকারী আব্দুর রহমানের বাবাকে ‘স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশনের’ পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের উদ্যোগে ব্যাটারি চালিত একটি পাখিভ্যান দেয়া হয়েছে। এসময় ভ্যান পেয়ে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুর রহমানের বাবা আক্তার বিশ্বাস। এখন আর কারোর থেকে হাত পাতবে না রহমান ও তার পরিবার। গতকাল শনিবার দুপুরে আক্তার বিশ্বাসের হাতে ভ্যানের চাবি তুলে দেন ওসি মোহাম্মদ মহসিন। ওসি মহসিন বলেন, স্বপ্ন পূরণ নামে একটি ফাউন্ডেশনের সাথে জড়িত আছি। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা মানুষের স্বপ্ন পূরণ করি। হতে পারে কেউ চিকিসক হতে চাই, টাকার অভাবে পড়তে পারছে না, কেউ চাই পড়াশোনা করতে কিন্তু বই কেনার সামর্থ নাই। আমরা সেই সব মানুষের স্বপ্ন পূরনের অংশিদার হয়। আর ভ্যানটি যাকে দিলাম সেই ব্যক্তি আয়ের উৎসের জন্য একটি ভ্যান চেয়েছিলো। তার ছোট্ট ছেলে আব্দুর রহমান স্কুলে যাবে। আজ দুজনের স্বপ্নকে আমাদের সংগঠন থেকে তার স্বপ্ন পূরণ করা হলো। আক্তার বিশ্বাস বলেন, আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর বড় ছেলে আব্দুর রহমান তার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে সাহায্য তুলে সংসার চালায়। সড়ক দুর্ঘটনার পর আমিও কাজ করতে পারিনা তেমন। ওসি সাহেবের নিকট একটি ভ্যান চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে ভ্যান দিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ছেলে আর সাহায্য তুলবে না। তাকে স্কুলে পাঠাবো। পড়াশোনা করাবো।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বলাডাঙ্গা গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় যশোর মণিরামপুরের বাদাম বিক্রেতা আক্তার বিশ্বাসের সঙ্গে। কিন্তু এখানে এসেও পিছু ছাড়েনি দরিদ্রতা। একদিনে আক্তার বিশ্বাসের সৎ মায়ের অত্যাচার অন্যদিকে দারিদ্রতা। তবুও আম্বিয়ার স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে ছোট্ট একটি সংসার করবেন। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে গড়ে তুলবেন সুখের সংসার। পরে কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে সাতক্ষীরা থেকে আম্বিয়া খাতুন স্বামী আক্তার বিশ্বাসের হাত ধরে চলে আসেন চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বস্তিতে। স্বামীর বাদাম বিক্রির টাকা দিয়ে কোনোমতে চলত তাদের সংসার। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আম্বিয়ার কোলজুড়ে আসে আব্দুর রহমান। স্বামীর স্বল্প আয় থেকে কিছু টাকা জমাতে থাকেন আম্বিয়া। ২০১৮ সালে খুলনার শিরোমণির গিলাতলা মোহাম্মদীয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করান ছেলে রহমানকে। ২০১৯ সালের মার্চে সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে আব্দুর রহমানকে মাদরাসা চলে আসতে বলে কর্তৃপক্ষ। আব্দুর রহমান হাফেজিয়া পড়ার পাশাপাশি ওই মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো। অভাব যখন নিত্যসঙ্গী ঠিক তখনই আম্বিয়ার গর্ভে আসে নতুন সন্তান। কিডনির সমস্যা এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার ভাড়া বাড়িতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান মা আম্বিয়া খাতুন। এর আগে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে আক্তার হোসেন ফেরি করে বাদাম বিক্রির সময় আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এরপর শুরু হয় আব্দুর রহমানের জীবনযুদ্ধ। ফলে বাধ্য হয়ে সংসারের বোঝা তুলে নিতে হয়েছে কাঁধে। বাবা-ভাইয়ের খাবার জোগাতে নামতে হয়েছে পথে। যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সেই রহমানকে শুরু করতে হয়েছে জীবন সংগ্রাম। ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে যা পায় তা দিয়েই চলতো সংসার।