গ্রামের ঈদ আনন্দ – হোসেন জাকির

 

রমজানের আড়াই মাস পড়ে আসে কোরবানির ঈদের আনন্দ। রোজাদারদের সবচেয়ে বড় আনন্দ ইফতার ও রমজান শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা। আর কোরবানির ঈদের আনন্দ কোরবানি করার সময়। কোরবানি ত্যাগ ও উদারতার পরীক্ষা। আর এ পরীক্ষার তাগিদে গ্রামে ঈদ করার জন্য অনেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাকুল হয়ে ওঠে গ্রামে আসতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির প্রতীক্ষা করতে হয়। অধিক অর্থ খরচ করেও মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে আসতে চায়। শহরের ইটপাথুরে ব্যস্ত জীবন ছেড়ে একটু স্বস্তির জন্য গ্রামে আসা। যদিও গ্রামে দিন আনা, দিন খাওয়া অধিকাংশ মানুষের বসবাস। মহিলারা কাপড়চোপড় কাচা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বছরে দুইবার তারা বেশি করে সাবান ব্যবহার করে গোসল করে। নতুন পোশাক পরে আতর ব্যবহার করে ঘুরে বেড়ায়, ঈদের আনন্দ করে। তাদের সেই মায়াভরা হাসি আনন্দের ব্যস্ততা সে কী, সেটা বলেও বুঝাতে পারবো না।

গত কয়েক বছর আগে ঈদের একটা আনন্দের ঘটনা মনে পড়ে। ছোট বোন-বোনাইরা এলো বাড়িতে। সবাইকে একসাথে পেয়ে আনন্দে মা কখন যে কী করছে তা বোঝা যাচ্ছে না। হরেক কিছিমের রান্নাবাড়া করেও মায়ের মন ভরছে না। অনেক আগে থেকেই বাড়িতে চা’র ব্যবস্থা চলে আসছে। মা এতো ব্যস্ততার মধ্যে চা’র পানি গরম করে ছোট বোনটাকে চিনি দিয়ে চা নামাতে বলে বিস্কুট আনতে যায়। ছোটবোন ভুল করে চিনির পরিবর্তে লবণ দিয়ে চা সবার ঘরে পৌঁছে দেয়। জামাইরা অতি কষ্টে দু-এক ঢোক গিলেও ফেলে। লজ্জায় কিছু বলে না। কিন্তু খাওয়ার সময় বিষয়টি আবার ধরা পড়ে। আমি বাড়ির বাইরে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ দেখি হাসাহাসি। বাড়িতে ঢুকেই শুনলাম মজার কাহিনী। শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। এ কথা শুনে আমার এক বন্ধু আর একটা কাহিনী শুনালো।

‘আমার বোনাই ঈদের পরে নামাজ পড়ে আমাদের বাড়িতে আসলো এবং পাশে আমার চাচার বাড়িতে দেখা করতে যাবে। রাস্তা দিয়ে না যেয়ে, আমবাগানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় বাগানে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে ছিলো। দ্রুত যাওয়ার পথে পা পিছলে পড়ে বেচারা একেবারেই চিৎপাটং। কাদা মেখে ভূত! হঠাৎ করে চিল্লাচিল্লি দেখে বাড়ি থেকে বাগানের দিকে ছুটে যাই। গিয়ে বোনাইয়ের দিকে তাকিয়ে আর সে হাসি কি হাসি ঠেকাতে পারি না। বেচারার ঈদের পোশাকের কী অবস্থা।’

এ কথা শুনে আরেক বন্ধু একা একাই হাসছে। জিজ্ঞাসা করলাম কীরে হাসছিস কেন? বলতেই সে শুরু করলো, ‘ঈদের আমাদের বাড়িতে এসে বাথরুমে যেয়ে দাঁত খুলে রেখে বড় দুলাভাই মাইনাস করতে গিয়েছে। বোনাসের টাকা কম দেয়ার কারণে আমার ছোট বোনটা একটু দুষ্টুমি করে দাঁতগুলো বাথরুম থেকে নিয়ে চলে আসে। বড় দুলাভাই বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে দাঁতগুলো নেই। বুঝলো ছোট শ্যালিকার কাজ। প্রথমে ছোট বোনটাতো অস্বীকার। পরে বেচারা লজ্জায় ঘরে ঢুকতে পারছে না। সম্মান রক্ষার্থে বড় বোনটা বোনাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সেই দাঁত ফেরত পায়। এ কথা যখন প্রকাশ পেলো সবার ভেতরে তখন হাসির ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো।’

চা’র দোকানে আড্ডা, নদীর ধারে বসে গল্প এ ধরনের অনেক আনন্দের গল্প লুকিয়ে থাকে গ্রামে। তাই বারবার মনে শাহানাজ রহমতুল্লার সেই বিখ্যাত গান- ‘একবার যেতে দে না- আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।’ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More