চুয়াডাঙ্গায় আবুল হোসেন স্মৃতি গণগ্রন্থাগার পুনরুদ্ধার কমিটির সভায় বিশিষ্টজনেরা

শতবর্ষ পুরোনো গ্রন্থাগারের মর্যাদা অনুধাবন করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় শতবর্ষ পুরোনো আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগার পুনরুদ্ধার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কস্থ শাহজাহান চত্বরের শুভতারা ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগারের নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
সভায় তরুণ সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মেহেরাব্বিন সানভী বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ইতিহাস ঐতিহ্যকে অক্ষুণœ রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শতবর্ষ পুরোনো এই গ্রন্থাগারের মর্যাদা আমাদের অনুধাবন করতে হবে।’
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কাজল মাহমুদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অবৈধভাবে নির্মিত তথাকথিত পৌর পাবলিক হলটি নকশাকে উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীক স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে। নকশার প্রথম ফ্লোরে শ্রীমন্ত টাউন হল নামেই একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ফ্যাসিবাদী মানসিকতায় দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।’
লেখক জাহিদ হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও লাইব্রেরি ধ্বংস করা হয়েছে, এমন কোনো নজির নেই। শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে লাইব্রেরিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করেছিলো।’
আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের উত্তরাধীকারী অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আজকে একশ সাত বছর পূর্বে চুয়াডাঙ্গাকে আলোকিত করার জন্য যে সকল জ্ঞান তাপস এই প্রতিষ্ঠানটি করেছিলো, তাদেরকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গার সভাপতি হাবিবি জহির রায়হান বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেছিলেন, কোনো কারণেই আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগার ও শ্রীমন্ত টাউন হলের অবকাঠামো নষ্ট করা যাবে না। অথচ, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন যোগসাজসের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান দুটিকে ধ্বংস করে অবৈধভাবে নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করেছে।’
আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগারের সাবেক নির্বাচিত সদস্য সাংবাদিক শাহ আলম সনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। লাইব্রেরি ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভা কোন বিধি-বিধানে এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, তার আইনগত ব্যাখা দেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব এবং কতর্ব্য।
আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগারের সাবেক নির্বাচিত সদস্য সাংবাদিক রাজিব হাসান কচি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ যাতে গড়ে না ওঠে এবং আজকের প্রজন্ম যাতে বইমুখি না হয়, তারই বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়েছে সাবেক মেয়রবৃন্দ।
কমরেড লিটু বিশ্বাস বলেন, ‘গঠনতন্ত্র মোতাবেক চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক এই লাইব্রেরির পদাধিকার বলে সভাপতি। তার উচিত অতিসত্বর প্রতিষ্ঠানকে সচল ও প্রাণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত কমিটির কাছে লাইব্রেরির সম্পদসমূহ ফিরিয়ে দেয়ার।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজ বলেন, ‘এই লাইব্রেরি চুয়াডাঙ্গার গণমানুষের সম্পদ। শতবছর পুরোনো এই জ্ঞান বিদ্যাপীঠটি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র যারা করেছে, তারা অবশ্যই ফ্যাসিস্ট মানসিকতার।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অ্যাড. বজলুর রহমান বলেন, ‘এই লাইব্রেরির সমুদয় কাগজপত্র উপস্থাপূর্বক জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হোক। অন্যথায় চুয়াডাঙ্গার মানুষের স্বার্থে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।’
চুয়াডাঙ্গা নাগরিক কমিটি ও চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ সেলিম বলেন, ‘আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গ্রন্থাগার ও শ্রীমন্ত টাউন হলে জমির ওপর অবৈধভাবে নির্মিত পৌর পাবলিক হলের ঠিকাদারের ম্যানেজার ইতোমধ্যে লাইব্রেরির কয়েক লাখ টাকা মূল্যের সেন্ট্রাল আইপিএসটি নিয়ে গেছে। আজ অব্দি পৌর প্রশাসক বা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ এই বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে জনশ্রুতি রয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘শতবছর পূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষরা চুয়াডাঙ্গাকে আলোকিত করতে এবং একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে ঘাম-শ্রম, অর্থ ও জমি দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। বিট্রিশ, পূর্ব-পাকিস্থান এবং বাংলাদেশ জন্মের ৪০ বছর পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলো চুয়াডাঙ্গার আপামর জনসাধারণ। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, চুয়াডাঙ্গার এই জেলার মানুষকে অন্ধকারে রাখার জন্য অবৈধ, অন্যায়, অনৈতিক ও সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে লাইব্রেরিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মালিকানাধীন নিয়ে গেছে। যা কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক, মুক্তবুদ্ধি ও মননশীলতার পরিচয় বহন করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা যে উদ্দেশ্যে এই লাইব্রেরিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলো, সেই উদ্দেশ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে লাইব্রেরি উদ্ধারের জন্য সকলে সহযোগিতা করি ও একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে এগিয়ে আসি।’
সভায় আগামী মঙ্গলবার বিকেল চারটায় আবুল হোসেন স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগারের বর্তমান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমী সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে লাইব্রেরির সদস্য, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও সুধী সমন্বয়ে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে সভা সূত্রে জানা গেছে। আলোচিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ (অবঃ) শাহজাহান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, নাজিম উদ্দীন, শফিকুল ইসলাম সহর আলী, নাজমুল ইসলাম, আবুল কাশেম প্রমুখ।
এছাড়াও সভায় তৌহিদ হোসেনকে আহ্বায়ক, সাংবাদিক রাজিব হাসান কচি ও অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার শিল্পীকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাংবাদিক শাহ আলম সনিকে সদস্য সচিব করে আবুল হোসেন ১৭ সদস্য বিশিষ্ট স্মৃতি সাধারণ গণগ্রন্থাগার পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, অ্যাড. বজলুর রহমান, অধ্যাপক শেখ সেলিম, অধ্যক্ষ (অব.) শাহজাহান আলী, ইকবাল আতাহার তাজ, জাহিদ হোসেন, কমরেড লিটু বিশ্বাস, হাবিবি জহির রায়হান, কাজল মাহমুদ, সহর আলী, নাজিম উদ্দীন, আবুল কাশেম, মেহেরাব্বিন সানভী ও নাজমুল ইসলাম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More