অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু

চালু হচ্ছে না জরুরি বিভাগ : ভর্তি হবে অন্য হাসপাতালের রেফার্ড রোগী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: অনেক বাধাবিপত্তির পর অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্তবিভাগে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে মেডিসিন বিভাগে এক নারী রোগীকে ভর্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রোগী ভর্তি চালু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু। তিনি বলেন, ‘রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামও সোমবার রোগী ভর্তি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে (কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটস ক্যাম্পাস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদ এরই মধ্যে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০জন শিক্ষার্থী আছেন। গত বছরের ১০ জুলাই ও চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবীর শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিত দিয়ে জানান, ২০ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬৮জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ৩৯জন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিয়োগকৃত ১৯জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০জনকে নেয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩৬জন আনসার সদস্য রাখা হয়েছে। তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারীও রাখা হয়েছে। রোববার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাখৈই গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা (৩৩) নামের নারীকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৯জন ও শিশু ওয়ার্ডে ২২জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত হাসপাতালে এ দুটি ওয়ার্ডেই রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেডিসিন বিভাগে সবোর্চ্চ ৪৫জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫জন রোগী ভর্তি করা হবে। হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) নাসিমুল বারী বলেন, জেনারেল হাসপাতাল থেকে যদি কোনো মেডিসিন ও শিশু বিভাগের রোগীদের রেফার্ড করতে হয়, তবে তা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। আর (আজ) সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য প্রশাসন) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা আছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা আছে। এদিকে হাসপাতালের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা বর্তমানে হাসপাতালের ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। অভিযোগ আছে, এই যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদক কেনাকাটার কাগজপত্র নিয়ে তদন্ত করছে। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর হাসপাতাল ভবনের একটি অংশে আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের নির্দেশে এটি চালু করা হয়। তবে বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, সেটা অবৈধভাবে কোনো অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছিলো। এই বহির্বিভাগ সেবা এখনো চলমান। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। প্রায় তিন মাস আগে হাসপাতালে রোগী ভর্তিসহ যাবতীয় কাজে প্রশাসনিক অনুমোদন পায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More