আবরার হত্যার রায় থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদ- ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রায় দেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদাণের পক্ষেই রইলেন। বুয়েটে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে বার্তা গেল যে, আপনি যত শক্তিশালী হোন না কেন, আপনার পেছনে যত শক্তি থাকুক না কেন, সত্য এবং ন্যায়বিচার একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই। আবরারের মৃত্যু আমাদের প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছে-ফ্যাসিজম যত শক্তিশালী হোক, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ কখনো কখনো জেগে ওঠে।
হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাবা বরকত উল্লাহ ও আবরারের ছোট ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইয়াজ। দ্রুত যেন রায় কার্যকর হয়, এটাই এখন তাদের চাওয়া। যদিও ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ৩ জন আগে থেকেই পলাতক ছিল। গত বছরের ৬ আগস্ট এ হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমিও কারাগার থেকে পালিয়ে গেলে পলাতকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪। প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় এ বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ। হাইকোর্টের বহুল প্রত্যাশিত এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলেই মনে করি আমরা। হাইকোর্টের এই রায় সমাজব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতেও সহায়ক হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করার জন্য আসামিরা যেভাবে পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে, আবরারকে কীভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প আর স্কিপিং রোপ দিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টা বেধড়ক পেটানো হয়েছিলো। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, এ হত্যাকা-ের জন্য তাদের অনুশোচনাও ছিলো না। ক্ষমতাসীন দলের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে তারা যে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো, আবরারের মৃত্যু দিবালোকের মতো তা পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু মেধাবীরাই শিক্ষালাভের সুযোগ পায়, তাকেও কলুষিত করেছে। যারা অপরাধের কারণে সাজাপ্রাপ্ত, তারাও কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীই ছিল। এ মেধাবী ছাত্ররাই তাদের এক সতীর্থকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা এক কথায় মর্মান্তিক। ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র রাজনীতির চর্চা যেন কল্যাণের পরিবর্তে ফ্যাসিজমের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে, সেদিকে এখন থেকেই নজর দিতে হবে। এজন্য প্রথমত রাজনৈতিক দলগুলোকেই ভূমিকা রাখতে হবে বেশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকেও দিতে হবে দায়িত্বশীলতার পরিচয়। কোনো অভিভাবকই চান না, তাদের সন্তান অপরাজনীতির চোরাপাঁকে জীবনকে নিয়ে যাক।
আমরা আশা করি, দেশের ছাত্র সমাজ, বিশেষত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য এক বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More