রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ কাম্য

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা স্বাগত জানাই। আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের সঙ্গে তিনি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইফতার করবেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের এ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যদিও বাংলাদেশে এটি তার দ্বিতীয় সফর। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা এখন অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে।
আমরা আশা করি, জাতিসংঘ মহাসচিব শক্তিশালী ও ইতিবাচক বার্তা দেবেন, যা রোহিঙ্গাদের দ্রুত সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে সহায়ক হবে।’ তার এ বক্তব্যে স্পষ্ট-প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা আশা করি, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফরের ফলে রোহিঙ্গা সংকট আবার বৈশ্বিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে গোলাগুলি-খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থিত ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্যের লড়াই যেন ‘স্থায়ী সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই মূলত এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি, যা অব্যাহত রয়েছে। গত চার বছরের বিভিন্ন সময়ে আটটি গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনায় অন্তত ২০২ জন খুন হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে ক্যাম্পগুলোয় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, বিদ্যমান সমস্যার সঙ্গে নতুন করে খাদ্য সংকট যোগ হলে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
উল্লেখ্য, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার যুগান্তরকে বলেছেন, বর্তমানে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশনকৃত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে ১২ দশমিক ৫ ডলার (জনপ্রতি) সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে দেওয়া হবে ৬ ডলার করে। তিনি আরও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেশি। তাদের যুগের পর যুগ হত্যা-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা জনগোষ্ঠীকে পাহারা দিয়ে রাখা নিঃসন্দেহে জটিল এক বিষয়। অনেক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু ক্যাম্প থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারে যুদ্ধ হচ্ছে, তাই সহজেই অনুমেয় সেখান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র আসছে।
বস্তুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের কাছে এর আগে বহুবার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। দুঃখজনক হলো, বিশ্বনেতারা মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সবাই শুধু আশার বাণী শুনিয়েছেন। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার বছরের পর বছর বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জাতিসংঘের সহায়তা কমিয়ে দেয়া হলে এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আরও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই আমরা আশা করব, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য জাতিসংঘের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More