আইনি জটিলতায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন স্থগিত

দুটি সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বৈঠকে একে ওপরকে দুষছে : উত্তপ্ত মিল আঙিনা

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। হাইকোর্টে রিট আবেদন, গঠনতন্ত্রজনিত কারণসহ আইনি জটিলতায় এ নির্বাচন স্থগিত করেছেন নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কেরুজ আঙিনায়। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। দুটি সংগঠনে তৎক্ষণিক বৈঠকে একে ওপরকে দুষে ঝাড়লেন ক্ষোভ। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ১৪ মার্চ। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ছিলেন প্রচারণায় ব্যস্থ। মাঠ গোছানোর প্রায় শেষ সময় এসেই ভোট বন্ধের ঘোষণায় হতবাক হতে হয়েছে প্রার্থী সমর্থক ও ভোটদের। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কেরুজ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তৌফিক হোসেন স্বাক্ষরিত পত্র ই-মেইল যোগে প্রেরণ করা হয়। পত্রে বলা হয়েছে, কোনো প্রকার আলোচনা বিহীন নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হয়। ইউনিয়নকে না জানিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে নতুন একজন সদস্য অর্ন্তভূক্তি করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের তারিখ, সময় ও স্থান চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পূর্বে এ দপ্তরকে অবহিত করা হয়নি। খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও এ দপ্তরে প্রেরণ করা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে নতুন একজন সদস্যকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে এ দপ্তর অবগত নয়। এ দপ্তরের অজ্ঞাতসারে নির্বাচনের তারিখ, সময়, স্থান নির্ধারণ, খসড়া এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশসহ নির্বাচন কমিটিতে নতুন সদস্য অর্ন্তভূক্ত করা মহামান্য হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পরিপন্থি। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কর্তৃক গৃহিত সিদ্ধান্তে ফলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সকল দ্বায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে। এছাড়া বিকেলে কেরুজ চিনিকলের ইক্ষু হিসাব বিভাগের চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক রাশেদুল হক কেরুজ নির্বাচন স্থগিত বিষয়ক ঢাকা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদারের মাধ্যমে রিট আবেদন করেন। দুটি পত্রের ভিত্তিতেই সন্ধ্যায় কেরুজ অতিথি ভবনে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এ বৈঠকে মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট আমলে নিয়ে, গঠনতন্ত্র বিষয়ক জটিলতা উল্লেখ্যসহ নানা সমস্যার কারণে ১৪ মার্চের নির্বাচন স্থগিত করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার। এ খবর কেরুজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সাথে সাথেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দর্শনা থানা পুলিশ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পরপরই সভাপতি পতপ্রার্থী তৈয়ব আলীর সংগঠন কার্যালয়ে কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা সমবেত হয়। এ সময় বক্তব্যকালে তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও সহসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান অভিন্ন ভাষায় বলেন, কেরুজ নির্বাচন বন্ধে শুরু থেকেই একটি চক্র কলকাঠি নাড়ছিলো। ফলে একের পর এক বাধার দেয়াল টপকে যখন ভোট দুদিন পর, ঠিক তখনই তাদের ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বন্ধ করা হলো ১২শ শ্রমিকের অধিকারের এবারের নির্বাচন। তাদের মুখোশ সকলের কাছে উন্মোচন হলো আজ। ভোটারদের উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনো সময় আছে। আইন মেনেই যথা সময়ে ভোটের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে পরপরই সভাপতি প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ সবুজ তার সাংগঠনিক কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠককালে তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, সবার মতো আমিও নির্বাচন চাই। কেন ভোট চাইবো না? এখনো পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকের দিক থেকে আমি অনেক এগিয়ে। নিশ্চিত বিজয় জেনেও ভোট বন্ধের কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি চেষ্টা করবো যত দ্রুত সম্ভব স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ভোটারদের ভোটাধিকারের সুযোগ তৈরি করার। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইন মেনে যা কিছু করার করবো সকলকে সাথে নিয়ে। এদিকে দুপক্ষের নেতৃবৃন্দই কোন প্রকার উস্কানিমূলক কথাবার্তা থেকে সকলকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ওইদিনই বিকেলে নির্বাচনী এলাকা বিবরণ ও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ৮ মার্চে ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তিতে আপত্তি ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৯ মার্চে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং ওইদিনই দাখিল করবেন। একইদিন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দসহ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের করার সময় নির্ধারিত ছিলো। ১০ মার্চে প্রকাশ করা হয়েছে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। ১৪ মার্চ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কথা থাকলে শেষ অবধি স্থগিত করা হলো এবারের নির্বাচন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More