সিয়াম সাধনায় পরিশুদ্ধ হোক জীবন

মুসলমানদের সংযম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা। দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের সওগাত নিয়ে সারা বিশ্বে মুসলমানের কাছে সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস এই পবিত্র মাহে রমজান ফিরে আসে। বছর ঘুরে আসা পবিত্র মাহে রমজান মাসের শুভাগমনকে আমরা স্বাগত জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস হলো পবিত্র রমজান মাস। পুণ্যময় এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে, হৃদয়কে প্রশান্ত করে। বিশ্ব মুসলিমকে সংযত-সুন্দর জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। মুসলিম নর-নারীর কাছে রোজার মাস অত্যন্ত কাক্সিক্ষত। মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলমানরা শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। মহান আল্লাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য। পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। আর এই পবিত্র মাসে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয়, এর পাশাপাশি তাগিদ দেয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের জন্য। রমজানের শিক্ষা হলো সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। নিজের এবং অন্যের ওপর জুলুম করা, অপচয় করা থেকে বিরত থাকা।
সিয়াম সাধনার মূল প্রতিপাদ্য হলো সংযমের শিক্ষা। ৃ্ররোজা পালনের মাধ্যমে প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের ফিতরাতে যে পাশবিক শক্তির উপস্থিতি আছে তা অবদমিত হয়। আধ্যাত্মিক বা রুহানি শক্তি বাড়ে। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসায় মানুষের জৈবিক চাহিদা খর্ব হয় এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য অবলম্বন, সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্ভ্রমবোধ ও সৌজন্য প্রদর্শন, সর্বোপরি সব কাজে বুদ্ধি-বিবেচনাপ্রসূত মাত্রা ও মূল্যবোধের অনুসরণ ব্যক্তি তথা সমাজজীবনের অনিবার্য অবলম্বন হওয়া আবশ্যক। সিয়াম সাধনায় এ শিক্ষা মানুষ অর্জন করতে পারে।
বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবতা ভিন্ন। এ দেশে রোজার মাস হওয়ার কথা শান্তিময়। কিন্তু রমজানে যেন সংযমের পরিবর্তে ভোগের বাধভাঙা জোয়ারে ভাসে জনজীবন। সংযম ও ত্যাগের মানসিকতার পরিবর্তে দেখা যায় বল্গাহীন ভোগের উদগ্র বাসনা। সবাই খাদ্য উৎসবে মেতে ওঠে। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। রোজাকে আমরা আত্মিক উন্নতির বাহন হিসেবে না নিয়ে ভোগের উৎসবে পরিণত করি। আত্মসংযমের মাসকে যে যার মতো স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়ে নিই। তবে মুনাফাখোরদের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিলে দায় মেটে না। প্রকৃত রোজাদার হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন থেকে নৈতিক এ অবক্ষয় মোকাবেলা করতে হবে।
পবিত্র এ মাসে আল্লাহর সব সৃষ্টি তার অশেষ রহমতে ধন্য হয়। পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা বিশ্বাসীর জন্য খুলে যায়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকলো, সে প্রকৃত সব কিছু থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও কল্যাণে পরিপূর্ণ। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা পালন করেন, তারাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়ার আশা করতে পারেন। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করবেন অসীম রহমত। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। রোজা পালনের মধ্যদিয়ে মুমিনরা আত্মিকভাবে নিজেদের আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করেন।
রমজান মাসে মুসলিমদের অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা সত্যিকার উপলব্ধির সাথে রোজা পালন করবো। এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত ঘটাব। মানুষে মানুষে বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের অবসান ঘটাতে যথাসাধ্য কার্যকর ভূমিকা রাখবো। সর্বদা সবার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবো। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রমজানের তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধি করা এবং সেই মোতাবেক আমল করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সিয়াম সাধনার শিক্ষা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করতে হবে। তবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিম-লে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে প্রত্যেকের জীবন পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে উঠুক; সমাজ হয়ে উঠুক মানবিকতাপূর্ণ-এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More