ভুট্টাক্ষেতে কলেজছাত্র রনজুকে কুপিয়ে হত্যা : রহস্য উন্মচনে অনুসন্ধানে একাধিক টিম
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বদনপুর মাঠে সেচ দিতে গিয়ে নিখোঁজ : অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নৃসংশতা
মিরাজুল ইসলাম মিরাজ: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ভুট্টাক্ষেত থেকে এক কলেজছাত্রের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম মাসুদ হাসান রঞ্জু। গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করেছে। সুরতহাল প্রস্তুত শেষে পুলিশ মরদেহ থানায় নিয়ে গেছে। নিহতের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। মাসুদ হাসান রঞ্জু (২৫) দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ার আজিজুর মীরের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) কনক কুমার দাস, সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবিরসহ পুলিশের একাধিক দল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে রঞ্জু গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবীরের স্যালো মেশিনে ভোলার বাগানের মাঠে ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দিতে যান। স্যালোমেশিনটি চালিয়ে দিয়ে হুমায়ুন কবীর মাঠ থেকে বাড়ি চলে যান। এ সময় মাঠে রঞ্জু একাই তাদের ভুট্টার জমিতে সেচ দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও সে বাড়িতে না ফেরায় তার বাবা আজিজুল মীর ছেলের জন্য মাঠে খাবার নিয়ে যায়। সেখানে তাকে না পেয়ে তার বাবা বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে তাকে না দেখে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি। পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তার বাবা আবারো ওই মাঠে যান৷ সেখানে গিয়ে মেশিনের পাশে রঞ্জুর মোবাইল ও স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। পরে ভুট্টা ক্ষেতে তার মরদেহ দেখতে পান।
এদিকে, একটি সূত্র বলছে মাসুদ হাসান রঞ্জুর কাছে দুটি মোবাইল থাকলেও হত্যাকান্ডের পর একটি মোবাইল পাওয়া গেছে। অপর মোবাইলটি নিয়েই রয়েছে রহস্যের জট। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি এবং থানা পুলিশও কাউকে আটক করেনি। তবে স্থানীয়রা বলছেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম।
নিহতের পিতা আজিজুল মীর বলেন, আমার ছেলে সকালে ভুট্টার জমিতে পানি দিতে মাঠে যায়। আমি ও জরুরি কাজে চুয়াডাঙ্গায় যায়। আমি বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারি সে দুপুরে খেতে আসেনি। তখন আমি তার জন্য খাবার নিয়ে ওই মাঠে যায়। তাকে মাঠে দেখতে না পেয়ে ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পাওয়ায় আধাঘন্টা অপেক্ষার পর খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। আমি বাড়ি এসে গোসল করে খেয়ে চায়ের দোকান যায়। সেখান থেকে সন্ধ্যার সময় বাড়ি এসে তার ফেরার কথা জিজ্ঞেস করলে বাড়ির লোকজন বলে সে তখনো বাড়ি ফেরেনি। তখন বাড়ি থেকে তার মোবাইলে একাধিক কল করেও তা রিসিভ হয়নি। পরে আমিসহ কয়েকজন আবার ওই মাঠে এসে দেখি মেশিনের পাশে তার মোবাইল ও স্যান্ডেল পড়ে আছে। পরে আশেপাশে খোঁজাখঁজির পর ভুট্টাক্ষেতের মধ্যে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত পড়ে থাকতে দেখি।
দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান বলেন, বদনপুর গ্রামের ভোলার বাগানের মাঠ এবং নাপিতখালি ঈদগাঁহের নিচে মরদেহটি পড়েছিল। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ক্ষত দেখতে পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি এটা একটা হত্যাকান্ড। মরদেহটির পরিবারের সদস্যরা এখনো পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটকও করা হয়নি। এই হত্যাকান্ডের সত্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.