জীবননগরে প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকারি গাছ কাটার সময় আটক ৩

অভিযুক্ত যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ বিএনপির

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগরের শাহাপুর-কোটচাঁদপুর সড়কে তাঁতীর পুকুর এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকারি গাছ কাটার অপরাধে পুলিশ ৩জনকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে শাহাপুর ক্যাম্প পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে গাছ কাটার সরঞ্জামাদিসহ হাতেনাতে ৩জনকে আটক করে জীবননগর থানায় হস্তান্তর করে। পুলিশের উপস্থিতি ও বিক্ষুদ্ধ জনতার তোপের মুখে গাছ বিক্রির সাথে জড়িত আরও কয়েকজন অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে গেছে। গাছ ৩টির ডালপালা কেটে ফেলায় এখন কালের সাক্ষী গোপাল হিসাবে সড়কের ধারে দাড়িয়ে রয়েছে। সরকারি গাছ কাটার বিষয়টি ফেসবুক লাইভে এসে প্রচার করায় রানা মহামুদ নামে সমাজ টিভি ডিজিটাল ক্রিয়েটরের উপর হামলা চালিয়ে শারারিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে আর এম টেলিকম’র সামনে রানা মাহমুদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। গাছ বিক্রির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হোসেন আলীর বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোনো ধরনের অপকর্মের দায় দায়িত্ব দল নিবে না। আটক হোসেন আলীকে সকল পর্যয়ের নেতাকর্মীদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল রাতে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে জেলা পরিষদ বাদী হয়ে জীবননগর থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছিল বলে ডিউটি অফিসার এসআই জাহিদ হোসেন মাথাভাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শাহাপুর গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে হোসেন আলী (৫১) শাহাপুর-কোটচাঁদপুর সড়কে শাহাপুর তাঁতীর পুকুর এলাকায় সরকারি ৩টি বড় রেন্ট্রকড়াই গাছ একই ইউনিয়নের পাকা গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আবু তালেব (৪২) ও তার সহোদর মোতালেব হোসেন (৪০)’র নিকট ৪৬ হাজার টাকার বিনিময় বিক্রি করে দেন। গতকাল শনিবার সকালে কাঠ ব্যবসায়ী আবু তালেব ও সহোদর মোতালেব হোসেন ৫/৬জন গাছকাটা শ্রমিক নিয়ে ডিজিটাল করাত দিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। এ সরকারি গাছ কাটার খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় ক্রেতা ও বিক্রেতা জনতার তোপের মুখে পড়েন। জনতার প্রতিবাদের মুখে গাছ বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, বাড়ির খড়ি করার জন্য ডালপালা গুলো কাটছি। এ সময় ক্রেতা আবু তালেব বলেন, শাহাপুর গ্রামের বিএনপি নেতা হোসেন আলী এ গাছ ৩টি ৪৬ হাজার টাকার বিনিময় বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরা সরকারি গাছ কিনতে আপত্তি করায় বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, দল আমাদের পাওয়ারে। আমি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে সব কিছু ম্যানেজ করে নিয়েছি। এ সময় স্থানীয় জনতার অভিযোগ পেয়ে শাহাপুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মেহেদী হাসান সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল থেকে গাছ বিক্রেতা হোসেন আলী, কাঠ ব্যবসায়ী আবু তালেব ও তার সহোদর মোতালেব আলীকে আটক করে জীবননগর থানায় হস্তান্তর করে। জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সোহাগ খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি ঘটনা শোনামাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তৎক্ষণাতভাবে গাছ কাটতে মানা করি। ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হোসেন আলীর নেতৃত্বে গাছ কাটা হচ্ছে। এই হোসেন আলী স্বৈরাচার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তিনি আওয়ামী নেতৃবৃন্দের সাথে এলাকায় অপকর্ম করে বেড়াতো। এলাকায় তার ভোট পর্যন্ত নেই। আমি শুনেছি সে বিএনপি করে, কিসের বিএনপি করে, কার নেতৃত্বে তিনি বিএনপি করেন। কিসের বলে সে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছে, তা আমরা জানি না। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সে অপকর্ম করেছে। বিএনপি তার দায়ভার বহন করবে না। তিনি উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নিকট দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে হোসেন আলীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, এটা সড়ক ও জনপথের গাছ। গাছগুলো আমরা উদ্ধার করে শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্প হেফাজতে জমা দিয়েছি। যেহেতু সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাছ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এদিকে সমাজ টিভি ডিজিটাল ক্রিয়েটর রানা মহামুদ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ফেসবুক লাইভে ঘটনাটি প্রচার করা হয়। সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন যুবদলের নেতা জিয়ার নেতৃত্বে হাসান ও জনিসহ ৬/৭জন আমাকে দোকান থেকে তুলে রাস্তার ওপর নিয়ে কিলঘুষি ও লাথি মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ হামলা ও লাঞ্ছিত করার অপরাধে উপজেলা বিএনপির সভাপতির আন্দুলবাড়িয়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে রাতে এক জরুরি সালিশসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ঘটনার ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে হামলার সাথে জড়িত ইউনিয়ন কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, যুবদল নেতা রুবেল, সমুন, জাহিদ, জনি, জিয়া ও রাজিব হোসেনকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলীয় সকল কর্মকান্ড থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সালিশ সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক আজিম খান, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন বলেন, কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার দল গ্রহণ করবে না। অভিযুক্ত যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More